https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

এআই রেড লাইন চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশের ঝুঁকি ও সমাধান

এআই রেড লাইন চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশের ঝুঁকি ও সমাধান এআই রেড লাইন চ্যালেঞ্জ: বাংলাদেশের ঝুঁকি ও সমাধান
 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ২১শ শতাব্দীর রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন অগ্রগতির অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে, অন্যদিকে তেমনি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। দেশ যখন দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে এবং ২০২৬ সালে সর্বনিম্নোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে ঐতিহাসিক উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এআই-এর সম্ভাবনাকে দায়িত্বশীলভাবে কাজে লাগানো অপরিহার্য।

স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষির উন্নয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষা ও শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি পর্যন্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে বৈষম্য বৃদ্ধি কিংবা মৌলিক অধিকার ক্ষয়ের মতো সমস্যা এড়াতে কার্যকর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।

বৈশ্বিক অন্তর্দৃষ্টি ও “রেড লাইন” ধারণা

বিশ্বব্যাপী এআই শাসন কাঠামোর আলোচনায় “রেড লাইন” বা লাল দাগের ধারণা ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে—যে সীমারেখা অতিক্রম করা যাবে না এআই ব্যবহারে। এটি কেবল একটি নিয়ন্ত্রক বিষয় নয়; বরং নৈতিক দায়বদ্ধতা ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বিষয়। বাংলাদেশের জন্য নিজেদের এআই রেড লাইন নির্ধারণ করা হবে উদ্ভাবন গ্রহণের পাশাপাশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা:

ইউনেস্কো এআই নীতি বিষয়ক সুপারিশ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কার্যকলাপ যেমন গণ নজরদারি ও সামাজিক স্কোরিং নিষিদ্ধ করতে সরকারগুলোকে উৎসাহিত করেছে।

ইইউ-এর এআই অ্যাক্ট আরও এগিয়ে গিয়ে সংবেদনশীল বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বায়োমেট্রিক শ্রেণিবিন্যাস, মুখাবয়ব চিহ্নিতকরণ ডেটা সংগ্রহ, ও পূর্বাভাসমূলক পুলিশি কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ নিরাপদ ও বৈষম্যহীন এআই ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

এই কাঠামোগুলো দেখায় যে কিছু এআই প্রয়োগ অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে—যেমন গোপনীয়তার ক্ষতি, বৈষম্য সৃষ্টি, বা মানব নিয়ন্ত্রণকে দুর্বল করা। বাংলাদেশও গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও সামাজিক ন্যায়ের দেশ হিসেবে এগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজস্ব বাস্তবতায় মানানসই নীতি গ্রহণ করতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য রেড লাইনের গুরুত্ব

“স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১” অর্জনের পথে ব্যাংকিং, কৃষি, শিক্ষা এবং সরকারি সেবায় এআই ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ঝুঁকি মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট সীমারেখা অপরিহার্য, যেমন:

মৌলিক অধিকার রক্ষা: নাগরিকের গোপনীয়তা ও জবাবদিহিতা লঙ্ঘন করে এমন এআই ব্যবহার রোধ করা।

পক্ষপাত ও বৈষম্য মোকাবেলা: নারী, প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বাদ না দিয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক ডেটা ব্যবহার নিশ্চিত করা।

গণতন্ত্র রক্ষা: ভুয়া তথ্য ছড়ানো বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত করতে এআই, বিশেষত জেনারেটিভ এআই, ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: স্বাস্থ্যসেবা বা পরিবহন খাতে ব্যবহারের আগে কঠোর পরীক্ষা করা।

বাংলাদেশের জন্য নির্দেশক নীতি

মানবাধিকারের অগ্রাধিকার: আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার (গোপনীয়তা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি) রক্ষা, সামাজিক স্কোরিং ও বায়োমেট্রিক নজরদারির মতো ক্ষতিকর অনুশীলন নিষিদ্ধ।

গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা: সরকার, বেসরকারি খাত, একাডেমি, নাগরিক সমাজ ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও আস্থা গড়ে তোলা।

প্রাসঙ্গিক সংবেদনশীলতা: বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতার সাথে মানানসই নীতি নির্ধারণ।

প্রয়োজন ও অনুপাত বজায় রাখা: কেবল গুরুতর ঝুঁকির প্রমাণ থাকলেই সীমাবদ্ধতা আরোপ।

ভবিষ্যৎমুখী নমনীয়তা: এআই দ্রুত পরিবর্তনশীল, তাই নিয়মিত পর্যালোচনা ও হালনাগাদ নিশ্চিত করা।

নিষিদ্ধ করার সম্ভাব্য ক্ষেত্র

গণ নজরদারি ও সামাজিক স্কোরিং।

অননুমোদিত বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ।

প্রতারণামূলক বা আসক্তিকর এআই।

বৈষম্যমূলক সিস্টেম (যেমন ঋণ, চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে)।

মানব নিয়ন্ত্রণহীন এআই সিস্টেম।

জাতীয় সক্ষমতা গড়ে তোলা

এআই সেফটি ইনস্টিটিউট গঠন: উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এআই পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য।

এআই প্রভাব মূল্যায়ন: সরকারি ক্রয়কৃত বা ঝুঁকিপূর্ণ এআই ব্যবহারের আগে ঝুঁকি নিরূপণ।

আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন: আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে।

ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি: নাগরিকদের সচেতন করা।

আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা: জাতিসংঘ, জি২০ প্রভৃতি বৈশ্বিক আলোচনায় অংশগ্রহণ।

সামনে এগোনোর পথ

এআই রেড লাইন চ্যালেঞ্জ উদ্ভাবনের বিরোধিতা নয়; বরং মানবকল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো দায়িত্বশীল উদ্ভাবন নির্ধারণের প্রয়াস। বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে, তখন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নে দায়িত্বশীল এআই গ্রহণ অপরিহার্য।

স্পষ্ট রেড লাইন নির্ধারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ মর্যাদা, সমতা ও গণতন্ত্রভিত্তিক এক ডিজিটাল ভবিষ্যতের প্রতি অঙ্গীকার প্রদর্শন করতে পারে। এর মাধ্যমে নিরাপদ, বিশ্বস্ত ও জনগণবান্ধব এআই ব্যবহারের পথ তৈরি হবে, যা জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্য ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

এএইচএম বজলুর রহমান, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ডিজিটাল গণতন্ত্র, তথ্যের অখণ্ডতা এবং ডিজিটাল উন্নয়ন অগ্রসারণে স্বীকৃত একজন চর্চাকারী। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল উন্নয়ন প্রচারে তিনি নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।