https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

জাতিসংঘে গৃহীত হলো ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর অঙ্গীকার

জাতিসংঘে গৃহীত হলো ডব্লিউএসআইএস+২০ আউটকাম ডকুমেন্ট এবং স্থায়ী হলো ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম জাতিসংঘে গৃহীত হলো ডব্লিউএসআইএস+২০ আউটকাম ডকুমেন্ট এবং স্থায়ী হলো ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম
 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ডব্লিউএসআইএস+২০ আউটকাম ডকুমেন্ট গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম তথা সংক্ষেপে আইজিএফ–কে জাতিসংঘের একটি স্থায়ী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো। একই সঙ্গে ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক তথ্যসমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

ডব্লিউএসআইএস+২০ পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ছিল—বিশ্ব তথ্যসমাজ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গত ২০ বছরে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা মূল্যায়ন করা। নিউইয়র্কে ১৬ থেকে ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে গৃহীত এই ডকুমেন্টে মানুষকেন্দ্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উন্নয়নমুখী তথ্যসমাজ গঠনের পথে অর্জন ও চ্যালেঞ্জ—দুটোই তুলে ধরা হয়েছে।

আইজিএফ হলো স্থায়ী: একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত

২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আইজিএফ–এর মেয়াদ আগে নির্দিষ্ট সময় পরপর নবায়ন করা হতো (২০১০ ও ২০১৫ সালে)। ডব্লিউএসআইএস+২০ আউটকাম ডকুমেন্টের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আইজিএফ–কে স্থায়ী জাতিসংঘ ফোরাম হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এই সিদ্ধান্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি ও প্রযুক্তি কমিউনিটির কাছেও ব্যাপকভাবে স্বাগত পেয়েছে।

ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, আইজিএফ–এর কার্যকারিতা বাড়াতে কাজের পদ্ধতি উন্নত করতে হবে এবং বিশেষভাবে উন্নয়নশীল দেশ ও কম প্রতিনিধিত্বপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ইন্টারসেশনাল কাজ জোরদার করা, জাতীয় ও আঞ্চলিক আইজিএফ উদ্যোগগুলোকে আরও শক্তিশালী করা এবং উদ্ভাবনী ও স্বচ্ছ সহযোগিতা পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইজিএফ সচিবালয় ও টেকসই অর্থায়ন

আউটকাম ডকুমেন্টে আইজিএফ সচিবালয়কে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে এবং টেকসই অর্থায়নের জন্য একটি প্রস্তাব তৈরির দায়িত্ব জাতিসংঘ মহাসচিবকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইজিএফ–কে প্রতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন কমিশনে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এবং জাতিসংঘের অন্যান্য প্রাসঙ্গিক প্রক্রিয়ায় তার ফলাফল জানাতে হবে।

আইজিএফ–এ সরকারগুলোর সংলাপ: সমঝোতার ভাষা

আইজিএফ–এ একটি আলাদা সরকারি সেগমেন্ট গঠনের বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। কেউ কেউ এটিকে ডিজিটাল গভর্ন্যান্সে সরকারগুলোর পারস্পরিক সংলাপ বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখেছেন, আবার অন্যরা আশঙ্কা করেছেন—এতে আইজিএফ–এর বহুপক্ষীয় চরিত্র ক্ষুন্ন হতে পারে।

শেষ পর্যন্ত সমঝোতার ভিত্তিতে ডকুমেন্টে বলা হয়েছে—সব স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সরকারগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রতিষ্ঠা ও সহায়তা করবে আইজিএফ।

ডব্লিউএসআইএস, জিডিসি ও জাতিসংঘের সমন্বয়

ডকুমেন্টে ডব্লিউএসআইএস ফোরাম বার্ষিকভাবে চালু রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে এবং জাতিসংঘের তথ্যসমাজ গ্রুপকে আরও কার্যকর ও গতিশীল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ডব্লিউএসআইএস অ্যাকশন লাইনগুলোর সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট (জিডিসি)–এর সংযোগ জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। 

ইউএনজিআইএস–কে ডব্লিউএসআইএস ও জিডিসি–এর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে একটি যৌথ রোডম্যাপ তৈরি করে ২০২৬ সালে সিএসটিডি–এ উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ডিজিটাল বৈষম্য দূর করাই মূল অগ্রাধিকার

ডব্লিউএসআইএস+২০ আউটকাম ডকুমেন্টে ডিজিটাল বৈষম্য কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে সংযোগের সুযোগ, সাশ্রয়ী ও মানসম্মত ইন্টারনেট, গ্রামীণ ও দূরবর্তী এলাকার অন্তর্ভুক্তি, ভাষাগত বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক পরিচয় সংরক্ষণ এবং সব স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

ডকুমেন্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি মানে শুধু ইন্টারনেট সংযোগ নয়; এর জন্য প্রয়োজন দক্ষতা উন্নয়ন, সহায়ক নীতিমালা এবং মানবাধিকার রক্ষা।

মানবাধিকার, তথ্যের সততা ও পরিবেশ

আউটকাম ডকুমেন্টে পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে—অনলাইনে ও অফলাইনে একই মানবাধিকার প্রযোজ্য। ঘৃণাত্মক বক্তব্য, সহিংসতা, ভুয়া তথ্য, সাইবার বুলিং ও শিশুদের অনলাইন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা রক্ষা এবং ইন্টারনেট শাটডাউন থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—ডিজিটাল প্রযুক্তির জ্বালানি ব্যবহার, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই ডিজিটাল পণ্যের আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।

দক্ষতা ও অর্থায়ন: বাস্তবায়নের চাবিকাঠি

ডিজিটাল দক্ষতা, নীতিগত ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোকে বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য বলা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সহ উদীয়মান প্রযুক্তিতে সক্ষমতা গঠনের জন্য বিভিন্ন জাতিসংঘ সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

শেষ কথা

ডব্লিউএসআইএস+২০ আউটকাম ডকুমেন্টটি ভোট ছাড়াই গৃহীত হলেও, কিছু সদস্য রাষ্ট্র এতে সংরক্ষণ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেক উচ্চাভিলাষী প্রস্তাব আলোচনার পথে দুর্বল হয়েছে। তবুও আইজিএফ–কে স্থায়ী করা এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর ওপর জোর দেওয়াকে অনেকেই এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন।

মোহাম্মদ আব্দুল হক অনু

মহাসচিব, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম এবং ফেলো, আইসক কমিউনিটি ২০২৫








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।