https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

UN General Assembly High-Level Meeting (১৬–১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) উপলক্ষে বৈশ্বিক অঙ্গীকার থেকে জাতীয় বাস্তবায়ন: বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠনে WSIS+20-এর পাঠ

UN General Assembly High-Level Meeting (১৬–১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) উপলক্ষে বৈশ্বিক অঙ্গীকার থেকে জাতীয় বাস্তবায়ন: বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠনে WSIS+20-এর পাঠ UN General Assembly High-Level Meeting (১৬–১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) উপলক্ষে বৈশ্বিক অঙ্গীকার থেকে জাতীয় বাস্তবায়ন: বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠনে WSIS+20-এর পাঠ
 

 তথ্যসমাজ গঠনের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে WSIS+20 পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক (১৬–১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) বিশ্বকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে—ডিজিটাল সমাজ গড়া কেবল প্রযুক্তি স্থাপন নয়; এটি অধিকার, সক্ষমতা, আস্থা এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার বিষয়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সময়োচিত অগ্রাধিকার হলো—বৈশ্বিক অঙ্গীকারকে পরিমাপযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবকেন্দ্রিক জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করা।

WSIS+20-এর মূল বার্তা স্পষ্ট: একটি মানুষ-কেন্দ্রিক তথ্যসমাজ মানে শুধু দ্রুতগতির ইন্টারনেট নয়; বরং নিরাপদ, অর্থবহ এবং সমান সুযোগভিত্তিক ডিজিটাল জীবন—যেখানে নারী, কিশোরী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রান্তিক শ্রমজীবী এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সমভাবে অংশ নিতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য WSIS+20—একটি বাস্তব আয়না

বাংলাদেশ ডিজিটাল সেবা, সংযোগ এবং উদ্ভাবনে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই অগ্রগতির সুফল কি সকলের কাছে সমানভাবে পৌঁছেছে? অন্তর্ভুক্তি, আস্থা ও জবাবদিহিতে ঘাটতি থাকলে ডিজিটাল রূপান্তর নতুন বৈষম্যও তৈরি করতে পারে। জাতীয় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি;

ইন্টারনেট থাকলেই ক্ষমতায়ন হয় না—দক্ষতা, ভাষা, নিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ীতা ছাড়া সংযোগ বৈষম্য বাড়াতে পারে।

ডিজিটাল গভর্নেন্স দুর্বল হলে ডিজিটাল রাষ্ট্রও দুর্বল—ডেটা ঝুঁকি, সাইবার হুমকি ও ভুল তথ্য আস্থাকে ক্ষয় করে।

ই-সেবা মানেই অন্তর্ভুক্তি নয়—কারা বাদ পড়ছে, কেন বাদ পড়ছে—এটা না মাপলে নীতিও অন্ধ থাকে।

WSIS+20 থেকে বাংলাদেশের জন্য ৫টি নীতিগত কম্পাস

১) অর্থবহ সংযোগ (Meaningful Connectivity):

কভারেজের পাশাপাশি সাশ্রয়ী ডেটা, স্থিতিশীল গতি ও নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা। দুর্গম চর/হাওর/পাহাড়ে ব্যাকহল উন্নয়ন, স্কুল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংযোগ এবং দুর্যোগকালীন যোগাযোগকে “ক্রিটিক্যাল সার্ভিস” হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া।

২) ডিজিটাল জনসেবা = অধিকার-সম্মত সেবা:

ডিজিটাল সেবায় অফলাইন বিকল্প, সহজ অভিযোগ প্রতিকার, নাগরিকের ভাষা ও সাক্ষরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নকশা নিশ্চিত করা। নতুবা সেবা “ফর্ম-নির্ভরতা” বাড়িয়ে নাগরিক ভোগান্তি তৈরি করে।

৩) আস্থা-ভিত্তিক ডেটা শাসন:

ডেটা সুরক্ষা কাঠামোতে স্বচ্ছতা, স্বাধীন তদারকি, ন্যূনতম ডেটা সংগ্রহ, উদ্দেশ্য-সীমাবদ্ধতা এবং কার্যকর আপিল/প্রতিকার নিশ্চিত করা জরুরি—কারণ আস্থার ভিত্তি ভেঙে গেলে ডিজিটাল সেবার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়।

৪) নিরাপদ ডিজিটাল পরিসর—বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের জন্য:

TFGBV, অনলাইন হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক ডিজিটাল নিরাপত্তা শিক্ষা, দ্রুত সহায়তা/হেল্পডেস্ক, প্ল্যাটফর্ম জবাবদিহি এবং ভুক্তভোগী-কেন্দ্রিক আইন প্রয়োগ জোরদার করা।

৫) স্থানীয় ভাষা ও জ্ঞান-পরিকাঠামো:

বাংলা কনটেন্ট, লোকাল সার্ভিস ডিজাইন, কমিউনিটি মিডিয়া/রেডিও এবং ওপেন স্ট্যান্ডার্ড—এগুলোকে “সফট সেক্টর” নয়, বরং অন্তর্ভুক্তির মৌলিক অবকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

“জাতীয় বাস্তবায়ন” মানে কী—৩ স্তরের রোডম্যাপ

স্তর–১: নীতি ও আইন (Rules of the game)

অধিকার-সম্মত ডেটা সুরক্ষা: স্বাধীন নিয়ন্ত্রক, স্বচ্ছতা রিপোর্ট, স্পষ্ট ব্যতিক্রম সীমা, বিচারিক তদারকি।

ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রা ব্যবহারে ইন্টারঅপারেবিলিটি ও ওপেন স্ট্যান্ডার্ড বাধ্যতামূলক।

স্তর–২: প্রতিষ্ঠান ও সক্ষমতা (Capacity to deliver)

সরকারি দপ্তরে ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ইউনিট—যারা UX, অন্তর্ভুক্তি, প্রাইভেসি ও সাইবার ঝুঁকি একসাথে বিবেচনা করবে।

ইউনিয়ন/ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিক সহায়তা কেন্দ্র শক্তিশালী করা—কারণ অন্তর্ভুক্তির ফলাফল শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পর্যায়েই নির্ধারিত হয়।

স্তর–৩: পরিমাপ ও জবাবদিহি (Accountability)

শুধু “কত সেবা অনলাইন” নয়—পরিমাপ করতে হবে:

নারী/প্রতিবন্ধী/গ্রামীণ ব্যবহারকারীর ব্যবহার হার

সেবায় সময়-খরচ কমার পরিমাণ

অভিযোগ নিষ্পত্তির গড় সময়

ডেটা লঙ্ঘন/সাইবার ঘটনার রিপোর্টিং ও প্রতিকার

নিরাপত্তা ও আস্থা সূচক (Trust metrics)

“WSIS+20 আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ডিজিটাল রূপান্তরের প্রকৃত মানদণ্ড হলো প্রযুক্তির বিস্তার নয়, বরং ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার, মানবাধিকার-সম্মত শাসন এবং নাগরিক আস্থা। বাংলাদেশে বৈশ্বিক অঙ্গীকারকে জাতীয় বাস্তবায়নে রূপ দিতে হলে সংযোগ, সক্ষমতা, সুরক্ষা ও জবাবদিহির ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ।”

এই বক্তব্য/লিখাটি UN GA High-Level Meeting (১৬–১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) প্রেক্ষাপটে WSIS+20-এর শিক্ষা ও বাংলাদেশের সম্ভাব্য জাতীয় অগ্রাধিকারের একটি নীতিগত সংক্ষিপ্তসার।

এ এইচ এম. বজলুর রহমান, এমএসএস (সরকার ও রাজনীতি), এলএল.বি, ডিজিটাল গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশের জন্য দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাম্বাসেডর








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।