https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

তথ্যসমাজের দুই দশক: সামনে এগোনোর দিশা দেখাচ্ছে WSIS+20

তথ্যসমাজের দুই দশক: সামনে এগোনোর দিশা দেখাচ্ছে WSIS+20 তথ্যসমাজের দুই দশক: সামনে এগোনোর দিশা দেখাচ্ছে WSIS+20
 

২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) আমাদের বৈশ্বিক তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এনেছিল। এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক তথ্যসমাজের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ প্রদান করে, যা আজকের ডিজিটাল শাসন কাঠামোর ভিত্তি স্থাপন করেছে।

বিশ বছর পূর্তিতে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো WSIS-এ নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি মূল্যায়ন করছে এবং সেইসাথে পুনর্নবীকৃত মনোযোগ ও পদক্ষেপের প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলোও চিহ্নিত করছে। এই আত্মসমালোচনার ফলশ্রুতিতেই WSIS+20 পর্যালোচনা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।

এই বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে পরামর্শ ও আলোচনায় WSIS+20-এর জন্য একটি সুস্পষ্ট ফলাফলের দলিল তৈরির দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত শূন্য খসড়া (Zero Draft) এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এক আশাব্যঞ্জক সূচনা।

ডিজিটাল বিভাজন কমানো ও অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি

শূন্য খসড়ায় ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণ ও অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আজ ৯৫% বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর ব্রডব্যান্ডে প্রবেশাধিকার রয়েছে এবং ২০০৫ সালের ১৫% থেকে ২০২৫ সালে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭%-এ—এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এখনো যে বৈষম্য বিদ্যমান, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশভেদে, নগর ও গ্রামাঞ্চলে, নারী-পুরুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বয়স্ক জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু ভাষাভাষীদের মধ্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। খসড়ায় সাশ্রয়ী মূল্যের ব্রডব্যান্ড, স্থানীয় বহুভাষিক কনটেন্ট এবং উন্নত ডিজিটাল সাক্ষরতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিজিটাল অর্থনীতি ও বৈষম্যের ঝুঁকি

ডিজিটাল অর্থনীতি বাণিজ্য, অর্থনীতি ও শিল্পে প্রবৃদ্ধির উত্তেজনাপূর্ণ সুযোগ তৈরি করছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোগ ও নারী-নেতৃত্বাধীন ব্যবসার জন্য। তবে প্রযুক্তিগত ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও অটোমেশনের ফলে বৈষম্য আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। খসড়ায় ডিজিটাল আর্থিক সেবার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে এবং সকল পক্ষকে উন্মুক্ত, ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যহীন ডিজিটাল পরিবেশ গড়ে তুলতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন

খসড়ায় পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICTs) জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হলেও এর বিস্তৃতি শক্তি খরচ, নির্গমন এবং ই-বর্জ্যের মতো চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এজন্য বৈশ্বিক পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণের রিপোর্টিং মানদণ্ড, টেকসই পণ্য নকশা ও সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নের জন্য বৈশ্বিক নির্দেশিকা তৈরির আহ্বান জানানো হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো—ডিজিটাল উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের প্রতিও দায়িত্বশীল থাকা।

মানবাধিকার ও আস্থা

শূন্য খসড়া ডিজিটাল সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে মানবাধিকারকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, নারী, শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রযুক্তিতে ব্যবহারকারীর আস্থা ও নিরাপত্তা জোরদার করার কৌশলকেও টেকসই উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের পূর্বশর্ত হিসেবে ধরা হয়েছে। খসড়ায় অনলাইন নির্যাতন, ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ভ্রান্ত তথ্য ইত্যাদির বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার কথাও বলা হয়েছে।

ইন্টারনেটের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য ও শাসন

খসড়ায় ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত, স্বাধীন, বৈশ্বিকভাবে প্রবেশযোগ্য, আন্তঃসম্পর্কযুক্ত, নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকার, বেসরকারি খাত, সিভিল সোসাইটি, একাডেমিয়া ও টেকনিক্যাল কমিউনিটিসহ সব পক্ষকে যুক্ত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্টারনেট শাসন আলোচনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) সক্ষমতা বৃদ্ধি

AI বিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য খসড়ায় জাতিসংঘ এআই গবেষণা কর্মসূচি ও একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমর্থনের উদ্দেশ্যে। Independent International Scientific Panel on AI এবং Global Dialogue on AI Governance-এর মতো চলমান উদ্যোগগুলোকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

IGF-এর স্থায়ী কাঠামো ও আর্থিক স্থায়িত্ব

ইন্টারনেট শাসনে বৈশ্বিক সহযোগিতার মূল ভূমিকাকে স্বীকার করে খসড়ায় ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামকে (IGF) জাতিসংঘের একটি স্থায়ী সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। সচিবালয়ের জন্য বাড়তি সহায়তা, উন্নত কর্মপদ্ধতি এবং ফলাফলগুলো জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কাছে উপস্থাপন করার প্রতিশ্রুতিও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একইসাথে, IGF-এর আর্থিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে মহাসচিবকে ভবিষ্যৎ অর্থায়নের প্রস্তাব দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

WSIS, GDC ও SDG-এর মধ্যে সমন্বয়

খসড়ায় WSIS, গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট (GDC) এবং ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের আন্তঃসম্পর্ককে জোর দেওয়া হয়েছে। দ্বৈততা এড়াতে যৌথ বাস্তবায়ন রোডম্যাপ, WSIS মেকানিজমে GDC রিভিউ অন্তর্ভুক্তকরণ এবং সাধারণ পরিষদে WSIS–GDC অগ্রগতি মূল্যায়নের মতো প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। ২০৩০ সালে WSIS–GDC যৌথ বাস্তবায়ন রোডম্যাপ ও এজেন্ডা ২০৩০ একসাথে পর্যালোচনার এবং ২০৩৫ সালে WSIS+30 পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আগামী দিনের প্রস্তুতি

ডিসেম্বর ২০২৫-এর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের আগে শূন্য খসড়া আসন্ন আলোচনার জন্য একটি গঠনমূলক ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। সদস্য রাষ্ট্র ও অন্যান্য পক্ষকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে আলোচনার মাধ্যমে ফলাফলের দলিলকে আরও পরিশীলিত করা যায় এবং কোন কোন উপাদান রাখা হবে, সংশোধন করা হবে বা বাদ দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা যায়।

এ. এইচ. এম. বজলুর রহমান | ডিজিটাল গণতন্ত্র উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা

বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি), এবং বাংলাদেশে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাষ্ট্রদূত, নীতি গবেষণা ফেলো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গণমাধ্যম, তথ্যের অখণ্ডতা ও সমাজ ! ceo@bnnrc.net








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।