জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন 70/125, শিরোনাম “Outcome Document of the High-Level Meeting of the General Assembly on the Overall Review of the Implementation of the Outcomes of the World Summit on the Information Society”, ২০২৫ সালের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পথ তৈরি করেছে, যা “WSIS+20” নামে পরিচিত।
এই বৈঠক হবে এক মূল্যবান সুযোগ, যেখানে সকল অংশীজন একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন। এতে বিশ্ব তথ্য সম্মেলনের (WSIS) অর্জিত সাফল্যগুলো যাচাই করা হবে, ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হবে এবং যে চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান তা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ বের করা হবে।
সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্টেকহোল্ডাররা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারবেন, যা প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সংলাপকে এগিয়ে নেবে। এই বৈঠকের ফলাফল টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০-এর পর্যালোচনা প্রক্রিয়াতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে, যাতে আমাদের ডিজিটাল খাতের কার্যক্রমগুলো বৃহত্তর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
WSIS+20 Modalities Resolution (A/RES/79/277) অনুসারে, আমরা ১৬–১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে একত্রিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। সাধারণ পরিষদের নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুযায়ী আয়োজিত এই অনুষ্ঠান তথ্য সমাজে সহযোগিতা ও অগ্রগতির এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে কাজ করবে।
WSIS+20 নেতৃত্ব ও জিরো ড্রাফট
WSIS+20-এর ২০ বছরের পর্যালোচনার সহ-সমন্বয়কারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন—জিরো ড্রাফট প্রকাশের মাধ্যমে। এর ফলে বিভিন্ন পক্ষ তাদের লিখিত মতামত জমা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, যা সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এবং পর্যালোচনায় বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম সভাপতি মিসেস আনালেনা বেয়ারবক পুনর্নিয়োগ দিয়েছেন: মি. একিতেলা লোকালে, কেনিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি, মিসেস সুয়েলা জানিনা, আলবেনিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি
এই সিদ্ধান্ত আন্তঃসরকারি প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে এবং WSIS-এর ফলাফলের সামগ্রিক বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করবে। তাদের নেতৃত্ব সহযোগিতা বাড়াতে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ডিজিটাল অধিকার আন্দোলনের সঙ্কট ও সম্ভাবনা
ডিজিটাল অধিকার আন্দোলন এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চ্যালেঞ্জগুলো হলো:
দীর্ঘস্থায়ী অর্থায়নের সংকট, কর্তৃত্ববাদী প্রযুক্তির উত্থান, ও সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন
তবে একই সময়ে ইতিবাচক পরিবর্তনেরও বড় সুযোগ রয়েছে—সহযোগিতা ও সম্পদের নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে।
প্রযুক্তি আজ ব্যক্তি, সরকার ও কর্পোরেশনের সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। সংঘাতের ফলাফল, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সহনশীলতা এখন নির্ভর করছে কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। একই সঙ্গে প্রতিরোধ ও দমন-পীড়নের গতিশীলতা আজ ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য সুসংহত কৌশল গড়ে তোলা এখন অপরিহার্য।
গ্লোবাল মেজরিটির নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম রক্ষায় নিরলস কাজ করছে। কিন্তু তারা একাধিক সমস্যার মুখোমুখি: জটিল প্রযুক্তি সামাল দেওয়া কঠিন, কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো সহজেই অস্বচ্ছ প্রযুক্তি গ্রহণ করছে, আর নাগরিক ক্ষেত্র দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। এর সঙ্গে তীব্র অর্থায়ন সংকট যোগ হয়ে তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন পর্যবেক্ষণের ক্ষমতাকে সীমিত করে তুলছে। এর ফলে গুরুতর ফাঁকফোকর তৈরি হচ্ছে।
নতুন পথ: নেটওয়ার্ক-ভিত্তিক রূপান্তর
এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন সংগঠন-কেন্দ্রিক ধারা থেকে নেটওয়ার্ক-কেন্দ্রিক অ্যাডভোকেসি মডেলে রূপান্তর।
মূল করণীয় পদক্ষেপগুলো হলো:
মানবসম্পদ, অবকাঠামো ও অর্থায়নের যৌথ ব্যবহার, বিশেষজ্ঞদের পুল তৈরি, সংকট মোকাবিলার নেটওয়ার্ক গঠন, ও যৌথ নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মসূচি
প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ:
নিরাপদ যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা, যৌথ নিরাপত্তা মূল্যায়ন পরিচালনা, ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য যৌথ অবকাঠামো গড়ে তোলা
এভাবে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করাই হবে একটি স্থিতিশীল কাঠামো গড়ে তোলার ভিত্তি।
আর্থিক পুনর্গঠন ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করবে। গ্লোবাল সাউথের নতুন সংগঠনগুলোকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সম্পদের পুনর্বণ্টন জরুরি। অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে আরও সহজলভ্য করতে হবে।
সহযোগিতার সংস্কৃতি
ডিজিটাল অধিকার আন্দোলনে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। সংকীর্ণ প্রকল্পভিত্তিক গ্রান্ট মেট্রিক্স থেকে বেরিয়ে এসে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে জ্ঞান ভাগাভাগি, সম্মিলিত কৌশল প্রণয়ন এবং যৌথ উদ্যোগ নেওয়া উৎসাহিত হবে।
উপসংহার
মানবসম্পদ, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, সময় এবং অর্থ একত্রে ব্যবহার করে আমরা ডিজিটাল অধিকার আন্দোলনকে একটি শক্তিশালী, টেকসই নেটওয়ার্কে রূপান্তর করতে পারি। এই সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদে নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পক্ষে কার্যকরভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেবে।
এ. এইচ. এম. বজলুর রহমান | ডিজিটাল গণতন্ত্র উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি), এবং বাংলাদেশে দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রাষ্ট্রদূত, নীতি গবেষণা ফেলো, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে গণমাধ্যম, তথ্যের অখণ্ডতা ও সমাজ! ceo@bnnrc.net
০ টি মন্তব্য