https://powerinai.com/

সাম্প্রতিক খবর

বাংলাদেশকে সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণ করা উচিত

বাংলাদেশকে সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণ করা উচিত বাংলাদেশকে সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণ করা উচিত
 

বর্তমানে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সাথে সাথে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। সরকারি কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাদীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিনোদনসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ইন্টারনেটের গতি এবং এর সাশ্রয়ী ব্যবহার এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। বিশেষ করে, গতিশীল এবং উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা দেশের গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে সমানভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশে  ব্রডব্যান্ড নীতির আওতায় সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণ করার প্রস্তাব একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যায়।

১. উন্নত ব্রডব্যান্ড সংযোগের গুরুত্ব

একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে তার ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর। উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কেবল শিক্ষা, ব্যবসা বা বিনোদনই নয়, বরং সরকারি সেবা, সুশাসন এবং নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং দ্রুত ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে এমন দেশের জন্য, দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা প্রদান করা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সুশাসনের উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

২. ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণের উপকারিতা

১০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট গতি অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক ডিজিটাল পৃথিবীতে কাজ করার জন্য আদর্শ গতি হিসেবে পরিগণিত হয়। এই গতি নিশ্চিত করলে বিভিন্ন প্রযুক্তি নির্ভর সেবা যেমন ভিডিও কনফারেন্সিং, ক্লাউড সার্ভিস, হাই ডেফিনেশন ভিডিও স্ট্রিমিং, ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) প্রযুক্তি আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন খাতে ডিজিটাল রূপান্তর দ্রুত হবে এবং উদ্যোক্তা, ছাত্র, শিক্ষক এবং অন্যান্য জনগণ ডিজিটাল মাধ্যম থেকে অধিক সুবিধা পাবে।

৩. গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণ

বাংলাদেশে শহর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ইন্টারনেট সেবার গুণগত মান এবং গতির বৈষম্য বিদ্যমান। শহরাঞ্চলে যেখানে ইন্টারনেটের গতি যথেষ্ট দ্রুত এবং সাশ্রয়ী, সেখানে গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত ধীর এবং অস্থির থাকে। ১০০ এমবিপিএস গতি সকল স্তরের ব্যবহারকারীর জন্য নিশ্চিত করা হলে, গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এটি বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সেবা খাতে ন্যায্য সুযোগের সৃষ্টি করবে।

৪. আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হওয়া

বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্রযুক্তি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং প্রতিষ্ঠান তাদের ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য উচ্চ গতি নিশ্চিত করছে। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তান তাদের জাতীয় ফাইবারাইজেশন নীতির অধীনে সকল ব্যবহারকারীর জন্য ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশকে একই পথে এগিয়ে যেতে হলে, ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণ করা জরুরি। এটি আমাদের ডিজিটাল ইকোনমি এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সহায়ক হবে।

৫. টেকসই ডিজিটাল অবকাঠামো গঠন

যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, তাই দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার জন্য টেকসই ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং মোবাইল টাওয়ারগুলোর মধ্যে ফাইবার সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, যা ভবিষ্যতে ৫জি রোলআউটেও সহায়ক হবে।

৬. প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক সুযোগ

উচ্চ গতির ইন্টারনেট প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করবে। উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত এবং সহজে তাদের পরিষেবা এবং পণ্য বাজারজাত করতে পারবে, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং ডিজিটাল ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও সাশ্রয়ী ও কার্যকর করবে।

৭. আইনি ও নিয়ন্ত্রক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের গতি বাড়াতে এবং ইন্টারনেটের পরিসেবা সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্কার অপরিহার্য। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যাতে ব্রডব্যান্ডের সম্প্রসারণ ও উচ্চগতির সেবা প্রদান সহজ হয়। পাশাপাশি, সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেল কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

আইনি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্কারও এই নীতির অংশ হবে, যাতে দেশের ব্রডব্যান্ড বৃদ্ধিতে বিদ্যমান বাধা দূর করা যায়। এতে স্পেকট্রাম ব্যবহারের সম্পর্কিত পরিবর্তন, ফাইবার ব্যাকহলের জন্য প্রণোদনা, এবং প্রাইভেট অপারেটরদের জন্য মূলধন ব্যয়ের বাধা কমানোর পদক্ষেপ সুপারিশ করা হবে। জাতীয় ফাইবারাইজেশন নীতি বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হবে, যা দেশের ব্রডব্যান্ড সেবা উন্নত, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী করে তুলবে।

২০২৫ সালের ব্রডব্যান্ড নীতির আওতায় বাংলাদেশে সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্য ১০০ এমবিপিএস গতি নির্ধারণের মাধ্যমে ডিজিটাল দেশের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। এটি বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। সরকারের সহায়তায়, আইনি সংস্কারের মাধ্যমে এবং পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টরের সমন্বয়ে এই লক্ষ্যটি অর্জন করা সম্ভব, যা বাংলাদেশকে বিশ্বের ডিজিটাল অগ্রসর দেশগুলোর মধ্যে স্থান দেবে।                                                                   

এ এইচ এম বজলুর রহমান, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম (APrIGF) এর ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (WSIS) +20 কর্ম দল সদস্য।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।