https://comcitybd.com/brand/Havit

কোলাজ কনজেকচার, বখ্যাত কোলাজ কনজেকচার, আরো কিছু উদাহরণ, আমাদের জানা ৫ চক্র বা লুপ, সবচেয়ে বেশি ধাপসংখ্যা দেখানো হলো

গণিতের অলিগলি

কোলাজ কনজেকচার, বখ্যাত কোলাজ কনজেকচার, আরো কিছু উদাহরণ, আমাদের জানা ৫ চক্র বা লুপ, সবচেয়ে বেশি ধাপসংখ্যা দেখানো হলো কোলাজ কনজেকচার, বখ্যাত কোলাজ কনজেকচার, আরো কিছু উদাহরণ, আমাদের জানা ৫ চক্র বা লুপ, সবচেয়ে বেশি ধাপসংখ্যা দেখানো হলো
 

কোলাজ কনজেকচার


কোলাজ কনজেকচারকে আমরা বলতে পারি একটি গাণিতিক সমস্যা সমাধানের বা গাণিতিক অভিযান চালানোর বিবৃতি। বিবৃতিটি বিবৃত হয় খুব সহজে। বোঝাও যায় সহজে। সমস্যাটি সমাধানের জন্য কিংবা এই অভিযানে নামার জন্য আহ্বান ও জানানো হয় সবাইকে।


বলা হয় : ইচ্ছেমতো যেকোনো একটি বড় কিংবা ছোট সংখ্যা নিয়ে এ সংখ্যা থেকে অভিযান শুরু করে লক্ষ্য হবে শেষ পর্যন্ত ১ সংখ্যাটিতে গিয়ে পৌঁছা। আর এই অভিযান চালানো বা সমস্যাটি সমাধানের জন্য অভিযাত্রীকে দুটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। শুরুতেই ইচ্ছেমতো নেয়া এই সংখ্যাটি যদি জোড় সংখ্যা হয়, তবে এর অর্ধেক করে নতুন সংখ্যায় চলে যেতে হবে। আর নেয়া সংখ্যাটি যদি বেজোড় সংখ্যা হয়, তবে এর তিনগুণের সাথে ১ যোগ করে পাওয়া সংখ্যায় চলে যেতে হবে। এভাবে পাওয়া নতুন সংখ্যাটি জোড় না বেজোড় তা বিচেনা করে এ থেকে আগের নিয়ম অনুসারে আরেকটি নতুন সংখ্যা বের করতে হবে। অর্থৎ এভাবে নতুন পাওয়া সংখ্যা জোড় হলে অর্ধেক করতে হবে, আর বেজোড় হলে এর তিনগুণের চেয়ে ১ বেশি যে সংখ্যা সে সংখ্যায় চলে যেতে হবে। একই নিয়মে এই প্রক্রিয়াটি বা গাণিতিক অভিযানটি বারবার চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ না অভিযাত্রী তার লক্ষিত বা টার্গেট ১ সংখ্যাটিতে গিয়ে পৌঁছুতে পারে। আর এভাবে ১ সংখ্যাটিতে পৌঁছা মাত্র শুরুতে নেয়া সংখ্যাটির ক্ষেত্রে এই অভিযান শেষ কিংবা বলা যায় এ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেছে। এভাবে ইচ্ছেমতো নতুন আরেকটি সংখ্যা নিয়ে শুরু করা যেতে পারে আরেকটি অভিযান। এভাবে প্রতিটি অভিযানেই ওপরে বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করে শেষ পর্যন্ত ১ সংখ্যাটিতে পৌঁছুতে পারা বা না পারভর মধ্যেই রয়েছে এ অভিযানের সাফল্য আর ব্যর্থতা। কারণ, ইচ্ছেমতো যেকোনো সংখ্যা নিয়ে উল্লিখিত নিয়ম অনুসরণ করে ১ সংখ্যাটিতে পৌঁছানোই হচ্ছে এই গাণিতিক অভিযানের মুখ্য করণীয়। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক। আর এ লেখার শুরুতেই ছাপা ছবিটিতে এ ধরনের একটি গাণিতিক অভিযানের সমস্যা সমাধানের ব্যাখ্যা রয়েছে। ছবিটির একদম বাম পাশে রয়েছে ২২ সংখ্যাটি। এর অর্থ আমরা ২২ সংখ্যা দিয়ে আমাদের এই অভিয়ান শুরু করছি। আগেই বলা হয়েছে এই অভিযান চালানোর সময় আমাদেরকে দুইটি নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেই নিয়ম অনুসারে শুরুতেই নেয়া ২২ সংখ্যাটি যেহেতু একটি জোড়সংখ্যা, তাই আমাদেরকে এই ২২ থেকে চলে যেতে হবে এর অর্ধেক ১১-তে। এবার ১১ যেহেতু বেজোড়, তাই আমাদের পরবর্তী সংখ্যা হবে এর তিনগুণের চেয়ে ১ বেশি যে সংখ্যা, অর্থাৎ ১১ × ৩ + ১ = ৩৪। এবার পাওয়া নতুন সংখ্যার ৩৪ একটি জোড় সংখ্যা। অতএর পরবর্তী নতুন সংখ্যাটি হবে ৩৪-এর অর্ধেক ১৭। এই ১৭ সংখ্যাটি একটি বেজোড় সংখ্যা। অতএব নিয়ম অনুসারে পরবর্তী নতুন সংখ্যা হবে (১৭ × ৩ + ১) বা ৫২। একই নিয়মে এই জোড় সংখ্যা ৫২ থেকে চলে যেতে হবে এর অর্ধেক ২৬ সংখ্যাটিতে, যা একটি জোড় সংখ্যা। অতএব এই ২৬ থেকে আমাদের চলে যেতে হবে এর অর্ধেক ১৩-তে। এবার পাওয়া নতুন সংখ্যা ১৩ হচ্ছে বেজোড়, অতএব এই ১৩ থেকে আমাদের চলে যেতে হবে নতুন সংখ্যা (১৩ × ৩ + ১) বা ৪০-এ। একই নিয়মে ৪০ জোড় সংখ্যা হওয়ায় এর পরবর্তী সংখ্যা হবে এর অর্ধেক ২০। এই ২০-এর পরবর্তী সংখ্যা হবে এর অর্ধেক ১০ এবং ১০-এর পর চলে যেতে হবে এর অর্ধেক ৫-এ। এই ৫ একটি বেজোড় সংখ্যা। অতএব ৫-এর পরবর্তী সংখ্যা হবে (৫ × ৩ + ১) বা ১৬। এবার পাওয়া ১৬ থেকে একই নিয়ম মেনে চলে যেতে হবে এর অর্ধেক ৮-এ। ৮ থেকে যেতে হবে এর অর্ধেক ৪-এ। এভাবে ৪-এর পরবর্তী নতুন সংখ্যা হবে ২ এবং সবশেষে এই ২ থেকে আমরা সহজেই নিয়ম মেনে চলে যেতে পারব ২-এর অর্ধেক ১-এ। আর এই ১ হচ্ছে আমাদের টার্গেট নাম্বার। অতএব টার্গেট নাম্বার ১-এ পৌঁছামাত্র আমাদের এই অভিযান শেষ। কিংবা বলা যায় আমাদের সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেছে। তাহলে আমরা দেখলাম যেকোনো অভিযানকারী এই ২২ সংখ্যাটি নিয়ে এসব বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন ১ সংখ্যাটিতে। এই বিষয়টিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে লেখার শুরুতে দেয়া ছবিটিতে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ধাপগুলো ছিল এরূপ : ২২ → ১১ → ৩৪ → ১৭ → ৫২ → ২৬ → ১৩ → ৪০ → ২০ → ১০ → ৫ → ১৬ → ৮ → ৪ → ২ → ১।


লক্ষ করি, আমরা ২২ সংখ্যাটি নিয়ে এই অভিযান চালিয়ে মোট ১৫টি ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত আমাদের টার্গেট নাম্বার ১-এ গিয়ে পৌঁছেছি। এখন আমরা যদি অন্য একটি সংখ্যা নিয়ে একই নিয়মে ১-এ পৌঁছার এই অভিযানে নামি, তবে হয়তো এর চেয়ে কম কিংবা বেশি সংখ্যক ধাপ পেরিয়ে ১-এ পৌঁছুব। আমরা যদি ১০ সংখ্যাটি নিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করি, তবে টার্গেট সংখ্যা ১-এ পৌঁছুতে ধাপগুলো হবে নিম্নরূপ : ১০ → ৫ → ১৬ → ৮ → ৪ → ২ → ১ → ৪ → ২ → ১। এ ক্ষেত্রে ১-এ পৌঁছুতে প্রয়োজন ৯টি ধাপ। আবার যদি শুরুতে ১১ সংখ্যা নিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করি তবে ১-এ পৌঁছুতে ধাপগুলো হবে নিম্নরূপ : ১১ → ৩৪ → ১৭ → ৫২ → ২৬ → ১৩ → ৪০ → ২০ → ১০ → ৫ → ১৬ → ৮ → ৪ → ২ → ১। এ ক্ষেত্রে ধাপসংখ্যা পাই ১৪টি। অতএব বিভিন্ন সংখ্যার ক্ষেত্রে এই ধাপসংখ্যা বিভিন্ন হতে পারে। লক্ষণীয় আরেকটি বিষয় হচ্ছে উপরের তিনটি ক্ষেত্রেই শেষ তিনটি ধাপ হচ্ছে একই অর্থাৎ ৪ → ২ → ১। এখানে ৪ থেকে যাওয়া হয়েছে ২-এ এবং ২ থেকে যাওয়া হয়েছে ১-এ।


এখানে রয়েছে তিনটি সংখ্যা : ৪, ২ ও ১। এখন শুরুতেই যদি আমরা ৪ কিংবা ২ নিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু করি এবং ১-এ পৌঁছার পরও এই প্রক্রিয়া আরো চালিয়ে যাই, তবে একটি মজার সম্পর্ক আমরা দেখতে পাব। ৪ দিয়ে শুরু করলে এর ধাপগুলো হবে এমন : ৪ → ২ → ১ → ৪ → ২ → ১ → ২ দিয়ে শুরু করলে এর ধাপগুলো হবে এমন : ২ → ১ → ৪ → ২ → ১ → ৪ → ১ দিয়ে শুরু করলে এর ধাপগুলো হবে এমন : ১ → ৪ → ২ → ১ → ৪ → ২ → লক্ষ করি, এই তিনটি ক্ষেত্রেই শেষ তিনটি সংখ্যা ৪, ২ ও ১ ধারাবাহিকভাবে বারবার ঘুরেফিরে আসছে। আমরা যদি দেয়া নিয়ম অনুসারে এই প্রক্রিয়া বা অভিযান যতই চালিয়ে চাই একই ঘটনা ঘটবে। তখন আমাদের অভিযান এই তিনটি সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। ৪-এর পর আসবে ২। ২-এর পর আসবে ১। ১-এর পর আসবে আবার ৪। আবার ৪-এর পর আসবে ২। এবং ২-এর পর আসবে ১.. .. .. এভাবে পরবর্তী সব অভিযান এই ৪, ২ ও ১-এর মধ্যে সীমিত হয়ে পড়বে। তখন আমরা বাঁধা পড়ে যাব ৪ → ২ → ১ লুপের বা চক্রের মধ্যে। এভাবে যে কোনো সংখ্যা নিয়ে এই গণিতাভিযান শুরু করি না কেনো, শেষ পর্যন্ত আমাদের টার্গেট সংখ্যা ১-এ পৌঁছুতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদেরকে এই ৪ → ২ → ১ লুপে গিয়ে পৌঁছুতে হবেই।


বখ্যাত কোলাজ কনজেকচার


এই কোলাজ কনজেকচার বলে : কেউ যদি ইচ্ছেমতো বড় বা ছোট যেকোনো ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা (পজিটিভ ইন্টিজার) নিয়ে শুরু করে ১ সংখ্যাটিতে পৌঁছতে চায়, তবে সে এক সময় ১-এ পৌঁছুতে পারবেই। এবং তাকে শেষ পর্যন্ত এই ৪ → ২ → ১ লুপে গিয়ে পৌঁছুতে হবেই। হয়তো কোনো কোনো সংখ্যার ক্ষেত্রে এই ১-এ পৌঁছুতে এত বেশি সংখ্যক ধাপ পার হতে হবে, যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। যেমন : ৯৭৮০৬৫৭৬৩১ সংখ্যাটি নিয়ে ১-এ পৌঁছার অভিযান শুরু করলে আমাদের পার হতে হবে ১১৩২টি ধাপ। কেউ হয়তো ভাবছেন, এমন সংখ্যা পাওয়া যাবে যা নিয়ে ওপরে বর্ণিত এই গণিত অভিযান চালিয়ে দেখিয়ে দেবেন, এই ৪ → ২ → ১ লুপ এড়িয়ে টার্গেট সংখ্যা ১-এ পৌঁছা যাবে। হয়তো কেউ ভাবছেন, এমন একটি সংখ্যা বের করতে খাতা-কলম নিয়ে বসে যাবেন, যা দিয়ে ভুল প্রমাণ করবেন এই কোলাজ কনজেকচার। তাহলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলতে চাই, সে চেষ্টা না করাই ভালো। অনেকেই বহু সংখ্যা নিয়ে চেষ্টা করে দেখেছেন ৪ → ২ → ১ লুপ এড়িয়ে টার্গেটসংখ্যা ১-এ গিয়ে পৌঁছুতে। আজ পর্যন্ত সবাই তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক ডাকসাইটে গণিতবিদও রয়েছেন। তারা কোলাজ কনজেকচার ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তারা তা পারেননি। তারা হয়তো সীমিত সংখ্যক সংখ্যা নিয়ে সে চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এটি নিশ্চিত তারা সব সংখ্যা নিয়ে এ চেষ্টা চালাননি বা চালাতে পারেননি। পুরো জীবনটা এর পেছনে কাটালেও কারো পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। কেননা, আমাদের সংখ্যা অসংখ্য। তাই বলা যাচ্ছে না সব সংখ্যার বেলায় কোলাজ কনজেকচার সত্য কি-না, অর্থাৎ যেকোনা সংখ্যা নিয়ে শেষ পর্যন্ত টার্গেট-সংখ্যা ১-এ পৌঁছা যাবে কি-না। অতএব কোলাজ কনজেকচার সত্য বা মিথ্যা আজো সে প্রমাণ মিলেনি। যেহেতু এখনো কোনোভাবেই আমরা এই কনজেকচারকে ভুল প্রমাণ করতে পারিনি, অতএব একে অনুমিত সত্য বলেই ধরে নিতে হবে। তবে গাণিতিক প্রমাণের অভাবে তাকে নিরেট সত্য বলেও নিশ্চিত হতে পারছি না। এটি সত্য বলে অনুমিত একটি গাণিতিক প্রস্তাব। তবে তা নিশ্চিত সত্য বলে গাণিতিক প্রমাণ এখনো আমরা কেউ দেখাতে পারিনি। এ ধরনের অনুমিত সত্য প্রস্তাবকেই গণিতে ‘কনজেকচার’ বা ‘অনুমিত সত্য’ নামে পরিচিত। যদি আমরা কেউ গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে দেখাতে পারি এটি সর্বৈব সত্য, তখন এটি হয়ে যাবে একটি গাণিতিক ‘তত্ত¡’ বা থিওরি’। তখন এটিকে আমরা কনজেকচার বলব না। যেহেতু আমরা এখনো তা প্রমাণ করে দেখাতে পারিনি, এবং তাকে অস্বীকারও করতে পারি না, তাই এটি একটি কনজেকচার বা অনুমান নামেই এখনো অভিহিত হচ্ছে। এই কনজেকচারটির নাম দেয়া হয়েছে Lothar Collaty-এর নামানুসারে। তিনি এর সূচনা করেন ১৯৩৭ সালে। ডক্টরাল ডিগ্রি লাভের দুই বছর পর তিনি এর সূচনা করেন। এটি নানা নামে পরিচিত : 3n + 1 problem, 3n + 1 conjecture, Ulam conjecture (Stanisłwa Ulam-এর নামানুসারে), Kakutanis problem (Shi“uo Kakutani এর নামানুসারে), Thwaites conjecture (Sir Bryan Thwaites-এর নামানুসারে), Hasses algorithm (Helmut Hasse-এর নামানুসারে), অথবা Syracuse problem। কোলাজ কনজেকচারের সংখ্যাক্রমকে (সিকুয়েন্স) কখনো বলা হয় হেইলস্টোন সিকুয়েন্স বা হেইলস্টোন নাম্বারস। কারণ, এসব সংখ্যার মান কখনো আকাশের শিলাবৃষ্টি মেঘের মতো কখনো ওপরে ওঠে আবার কখনো নিচে নামে। এই সংখ্যাগুলোকে আবার ওউনডারাস নাম্বারস বা বিস্ময়কর সংখ্যাও বলা হয়। হাঙ্গেরির বিখ্যাত গণিতবিদ ও বহু কনজেকচারের সূচনাকারী পল এরডস (১৯১৩-১৯৯৬) কোলাজ কনজেকচার সম্পর্কে বলে গেছেন Mathematics may not be ready for such problems: হতে পারে গণিত এ ধরনের সমস্যার জন্য প্রস্তুত নয়’। এরডস এই সমস্যা সমাধানের জন্য ৫০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ২০১০ সালে গণিতবিদ ও মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফারি লেগারিয়াস বলেন কোলাজ কনজেকচার একটি ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি ডিফিকাল্ট প্রবলেম’, যা পুরোপুরিভাবে আজকের দিনের গণিতবিদদের নাগালের বাইরে।


আরো কিছু উদাহরণ


আমরা যদি ১২ সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করি, তবে টার্গেট সংখ্যা ১-এ পৌঁছুতে সংখ্যাধারা বা সিকুয়েন্সটি হবে এমন : ১২, ৬, ৩, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১। এখানে ১-এ পৌঁছুতে প্রয়োজন ৯টি ধাপ। ১৯ সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করলে ১-এ পৌঁছুতে প্রয়োজন হবে আরো বেশি ধাপ : ১৯, ৫৮, ২৯, ৮৮, ৪৪, ২২, ১১, ৩৪, ১৭, ৫২, ২৬, ১৩, ৪০, ২০, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১Ñ বিশটি ধাপ। একইভাবে ২৭ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে ১-এ পৌঁছুতে প্রয়োজন আরো বেশি অর্থাৎ ১১১ ধাপ। এর নাম্বার সিকুয়েন্সটি নিচে দেয়া আছে। এর মধ্যে ৪১টি আছে বেজোড় সংখ্যা, যা বোল্ড আকারে দেখানো হয়েছে। লক্ষণীয়, ২৭ সংখ্যাটিকে কোলাজ কনজেকচারের শর্ত অনুযায়ী ১-এ পৌঁছাতে এই সিকুয়েন্সে বা সংখ্যাক্রমটি সর্বোচ্চ লাল চিহ্নিত ৯২৩২ সংখ্যায় উঠতে হয়েছে। নিচে ২৭ সংখ্যাটির সিকুয়েন্স বা ১-এ পৌঁছার ধাপগুলো দেখানো হলো : ২৭, ৮২, ৪১, ১২৪, ৬২, ৩১, ৯৪, ৪৭, ১৪২, ৭১, ২১৪, ১০৭, ৩২২, ১৬১, ৪৮৪, ২৪২, ১২১, ৩৬৪, ১৮২, ৯১, ২৭৪, ১৩৭, ৪১২, ২০৬, ১০৩, ৩১০, ১৫৫, ৪৬৬, ২৩৩, ৭০০, ৩৫০, ১৭৫, ৫২৬, ২৬৩, ৭৯০, ৩৯৫, ১১৮৬, ৫৯৩, ১৭৮০, ৮৯০, ৪৪৫, ১৩৩৬, ৬৬৮, ৩৩৪, ১৬৭, ৫০২, ২৫১, ৭৫৪, ৩৭৭, ১১৩২, ৫৬৬, ২৮৩, ৮৫০, ৪২৫, ১২৭৬, ৬৩৮, ৩১৯, ৯৫৮, ৪৭৯, ১৪৩৮, ৭১৯, ২১৫৮, ১০৭৯, ৩২৩৮, ১৬১৯, ৪৮৫৮, ২৪২৯, ৭২৮৮, ৩৬৪৪, ১৮২২, ৯১১, ২৭৩৪, ১৩৬৭, ৪১০২, ২০৫১, ৬১৫৪, ৩০৭৭, ৯২৩২, ৪৬১৬, ২৩০৮, ১১৫৪, ৫৭৭, ১৭৩২, ৮৬৬, ৪৩৩, ১৩০০, ৬৫০, ৩২৫, ৯৭৬, ৪৮৮, ২৪৪, ১২২, ৬১, ১৮৪, ৯২, ৪৬, ২৩, ৭০, ৩৫, ১০৬, ৫৩, ১৬০, ৮০, ৪০, ২০, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১। এখানে আমরা স্পষ্টত দেখতে পেয়েছি বিভিন্ন সংখ্যা নিয়ে শুরু করে ১-এ পৌঁছাতে ধাপসংখ্যা বিভিন্ন হয়। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ৬৩, ৭২৮, ১২৭ সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করলে ১-এ গিয়ে পৌঁছুতে প্রয়োজন ৯৪৯টি ধাপ। আর ৬৭০, ৬১৭, ২৭৯ সংখ্যাটির ক্ষেত্রে প্রয়োজন ৯৮৬টি ধাপ। এভাবে বিভিন্ন সংখ্যার জন্য এ ধাপ সংখ্যা বিভিন্ন হয়ে থাকে।


আমাদের জানা ৫ চক্র বা লুপ


আমরা এর আগে দেখেছি, যদি ৪, ২ অথবা ১ দিয়ে শুরু করি তবে এই তিনটি সংখ্যা একটি চক্রে বা লুপে বাধা পড়ে। সংখ্যা তিনটি ধারাবাহিকভাবে একটির পর একটি এসে চক্রাকারে ঘুরতে থাকবে এভাবে : ১ → ৪ → ২ → ১। তেমনি ০ সংখ্যাটি নিয়ে অভিযান শুরু করলে তা ০ থেকে ০-এ চক্রাকারে ঘুরতে থাকবে : ০ → ০। তাহলে ধনাত্মক কোনো সংখ্যা নিয়ে শুরু করলে আমরা পাব দুটি লুপ বা চক্র : এক : ১ → ৪ → ২ → ১ দুই : ০ → ০ অপরদিকে ঋণাত্মক সংখ্যা নিয়ে কোলাজ কনজেকচারের অপারেশন অব্যাহতভাবে চালিয়ে গেলে আমরা পাব আরো তিনটি লুপ বা চক্র : এক : -১ → -২ → -১। দুই : -৫ → -১৪ → -৭ → -২০ → -১০ → -৫। তিন : -১৭ → -৫০ → -২৫ → -৭৪ → -৩৭ → -১১০ → -৫৫ → -১৬৪ → -৮২০→ -৪১ → -১২২ → -৬১ → -১৮২ → -৯১। অতএব জেনে রাখি : যেকোনো ধনাত্মক বা ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা নিয়ে কোলাজ কনজেকচারের অভিযানে নামলে ওপরে বর্ণিত ৫টি সাইকল বা লুপে গিয়ে পৌঁছুব। এ ক্ষেত্রে এর বাইরে আর কোনো সাইকল বা চক্র পাব না।


সবচেয়ে বেশি ধাপসংখ্যা


পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে কোলাজ কনজেকচারের অপারেশনে বা অভিযানে ১-এ পৌঁছুতে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের সংখ্যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট একটি সংখ্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ধাপ বা স্টেপ অতিক্রম করতে হয়। যেমন ১০-এর চেয়ে ছোট সংখ্যাগুলোর মধ্যে ৯-এর ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং ৯-এর ক্ষেত্রে ধাপসংখ্যা হচ্ছে ১৯টি। এই ১৯টি ধাপ হচ্ছে : ৯, ২৮, ১৪, ৭, ২২, ১১, ৩৪, ১৭, ৫২, ২৬, ১৩, ৪০, ২০, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২ ও ১। একইভাবে ১০০-এর চেয়ে যেসব সংখ্যা রয়েছে তার মধ্যে ৯৭ সংখ্যাটির ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ৯৭-এর ক্ষেত্রে অতিক্রম করতে হয় ১১৮টি ধাপ। আমরা কোনো গ্রুপের সংখ্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপের সংখ্যাগুলোর ধাপসংখ্যা জেনে নিতে পারি নিচের ছক থেকে


১০-এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৯-এ, এর ধাপসংখ্যা ১৯। ১০০-এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৯৭-এ, এর ধাপসংখ্যা ১১৮। ১০০০-এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৮৭১- এ, এর ধাপসংখ্যা ১৭৮। ১০৪ -এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৬১৭১-এ, এর ধাপসংখ্যা ২৬১। ১০৫ -এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৭৭০৩১- এ, এর ধাপসংখ্যা ৩৫০। ১০৬ -এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৮৩৭৭৯৯- এ, এর ধাপসংখ্যা ৫২৪। ১০৭ -এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৮৫০০৫১১-এ, এর ধাপসংখ্যা ৬৮৫। ১০৮ -এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৬৩৭২৮১২-এ, এর ধাপসংখ্যা ৯৪৯। ১০৯ -এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৬৭০৬১৭২৭৯-এ, এর ধাপসংখ্যা ৯৮৬। ১০১০-এর ছোট সংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধাপ লাগে ৯৭৮০৬৫৭৬৩০-এ, এর ধাপসংখ্যা ১১৩২। এভাবে যত বড় সংখ্যার দিকে এগিয়ে যাব ততই ধাপসংখ্যা বেড়ে যেতে থাকবে। আবার বিভিন্ন সংখ্যার ক্ষেত্রে ১-এ পৌঁছানোর ধাপসংখ্যা একই বা সমান হতে পারে। যেমন ৯৭৮০৬৫৭৬৩১ এবং ৯৭৮০৬৫৭৬৩০ এই উভয় সংখ্যার ক্ষেত্রেই ধাপসংখ্যা ১১৩২। লক্ষণীয় : যেসব সংখ্যাকে ২-এর পাওয়ার আকারে প্রকাশ করা যায়, সেগুলোকে ১-এ নিয়ে যাওয়া যায় দ্রুত ও সহজে। কারণ, এ ধরনের সংখ্যাকে বারবার ভাগ করলেই ১-এ পৌঁছা যায়। যেমন : ২ ১ = ২; এর ধাপগুলো : ২, ১ ২ ২ = ৪; এর ধাপগুলো : ৪, ২, ১ ২ ৩ = ৮; এর ধাপগুলো : ৮, ৪, ২, ১ ২ ৪ = ১৬; এর ধাপগুলো : ১৬, ৮, ৪, ২, ১ .. .. .. ২ ৭ = ১২৮; এর ধাপগুলো : ১২৮, ৬৪, ৩২, ১৬, ৮, ৪, ২, ১ সহজেই ধরা যায়, এখানে ২-এর পাওয়ার যত, ধাপসংখ্যাও তত। কোলাজ কনজেকচারের ক্ষেত্রে ‘স্টপিং টাইম’ বলে একটি কথা আছে। একটি সংখ্যা কোলাজ কক্ষপথে বিচরণ করে সবচেয়ে কম কত ধাপে ১-এ গিয়ে পৌঁছুতে পারে, সে সংখ্যাই হচ্ছে এই সংখ্যাটির স্টপিং টাইম। যেমন ১০ সংখ্যাটির স্টপিং টাইম হচ্ছে ৬, এবং ১১ সংখ্যাটির স্টপিং টাইম ১৪








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।