https://comcitybd.com/brand/Havit

প্রযুক্তি

রোবট রেফারি

রোবট রেফারি রোবট রেফারি
 

রোবট রেফারি


‘ওয়ার্ল্ড টিম টেনিস’ ম্যাচ চলছিল। শিকাগোর পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় টেলর টাউনসেন্ড এতে অংশ নেন। তিনি বল সার্ভ করলেন। এটি নেটের ওপর দিয়ে চলে গেল প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের কাছে। তিনি তার ব্যাট দিয়ে আঘাত করে বলটি ফেরত পাঠালেন টাউনসেন্ডের দিকে। বলটি কোর্টের শেষ লাইনের একটু বাইরে গিয়ে পড়ল। সাথে সাথে আম্পায়ারের কাছ থেকে একটি আওয়াজ শোনা গেল ‘আউট’। এই আওয়াজটি আসেনি বাস্তব কোনো মানব আম্পায়ারের কাছ থেকে। ‘আউট’ শব্দটি এসেছে ঐধশি-ঊুব খরাব নামের একটি কমপিউটার ব্যবস্থা থেকে। এ কমপিউটর ব্যাবস্থা ওয়ার্ল্ড টিম ম্যাচের প্রতিটি খেলায় বলের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। আসলে এই ‘হক-আই-লাইভ’ কমপিউটার ব্যবহার কাজ হচ্ছে টেনিস বলটি ঠিক কোথায় গিয়ে পড়ল, তা লক্ষ করে সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে ‘আউট’ বা ‘নট আউট’ ঘোষণা দেয়া। খেলার সময় সবকিছুই ঘটে দ্রুত গতি নিয়ে। অলিম্পিক গেমসে একটি টেনিস বল চলে মোটামুটি ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার তথা ১২০ মাইল বেগে। বেসবল পিচে প্লিটের ওপর জুম করতে পারে ১৫০ 


কিলোমিটার বা ১২০ মাইলের অধিক বেগে। একজন জিমনাস্ট এক সেকেন্ড সময়ের মাঝে ভোল্ট ছেড়ে কয়েকবার ফ্লিপ ও টুইস্ট করতে পারে। এই গতিতে বলের অবস্থানের যথার্থতা নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ। একটি টেনিস খেলা চলবে ততক্ষণ, যতক্ষণ বল কোর্টের লাইনের বাইরে গিয়ে না পড়ে। একটি বেসবল অবশ্যই পার হয়ে যেতে হবে হিটারের কাছের একটি অদৃশ্য বাক্সের ভেতর দিয়ে একটি স্ট্রাইক কাউন্ট করার জন্য। এবং একজন জিমনাস্টকে গ্রেড দেয়া হয় কতগুলো ফ্লিফ ও টুইস্ট সে সম্পন্ন করলো এবং কতটুকু ভালোভাবে সে তা করতে সক্ষম হলো, তার ওপর নির্ভর করে। এসব কল দিতে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য মানব রেফারি, আম্পায়ার ও বিচারকদের কয়েক বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। কিন্তু এর পরও মানুষের চোখ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। এমনকি সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ রেফারিও ভুল করতে পারেন। ভুল ‘আউট’ বা ‘নট আউট’ কল দিতে পারেন। অলিম্পিক খেলায় একজন কর্মকর্তার ভুলের কারণে স্বর্ণপদক চলে যেতে পারে একজন ভুল খেলোয়াড় কিংবা একটি ভুল টিমের কাছে এই অভিমত টেনিস আম্পায়ার ব্রায়ান হিকসের। প্রশ্ন হচ্ছে ‘হক-আই’-এর মতো প্রযুক্তি কি কখনো বলের ওপর সঠিক নজর রেখে এই সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে? হ্যাঁ, পারেÑ এমনটি মনে করেন অনেক কোচ, খেলোয়াড়, এমনকি আম্পায়ারও। ব্রায়ান হিকস বলেনÑ ‘হক-আই-লাইভ’ টেনিসকে করে তুলেছে আরো ‘অ্যাকুরেট’ তথা যথার্থ। এ ধরনের ব্যব¯ ’ া অনেক খেলাকেই আরো সুষ্ঠু করে তুলতে পারে। এরই মধ্যে বেশ কিছু সংগঠন এই ব্যবস্থাটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবহার এরই মধ্যে বিভিন্ন খেলায় মানব-আম্পায়ার বা বিচারকদের অনেক কাজ সম্পাদন করে দিচ্ছে। হয়তো এখনো পেশাদার ও অলিম্পিক কোয়ালিফাইং কমপিটিশনে এগুলোর ব্যবহার না-ও দেখে থাকতে পারেন। কিন্তু আগামী কয় বছরের মধ্যে এসব কমপিটিশনে এর প্রচুর ব্যবহার চলতে দেখা যাবে।


একটি ভার্চ্যুয়াল টেনিস কোর্ট 


অনেক প্রফেশনাল টেনিস খেলায় ‘চেয়ার-আম্পায়ার’ নামে পরিচিত মূল আম্পায়ার বসেন ঠিক নেটের কাছে। একই সময়ে আরো সর্বোচ্চ ৯ জন আম্পায়ার কোর্টের চারপাশের লাইনগুলোর ওপর নজর রাখেন। এসব লাইন আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নেন, বল কোর্টের ভেতরে না বাইরে পড়েছে। এর ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয় কোন খেলোয়াড় পয়েন্ট পাবেন, আর কোন খেলোয়াড় পয়েন্ট হারাবেন। কিন্তু ‘হক-আই’ কমপিউটার বলের ওপরও নজর রাখে। কোনো খেলোয়াড় আম্পায়ারের কলের সাথে দ্বিমত পোষণ করলে তা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। তখন আম্পায়াড় নির্ভর করেন ‘হক-আই’ কমপিউটারের দেয়া রেজাল্টের ওপর। ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসে ব্যাপারটি ভিন্ন। এই সংগঠন প্রতি বছর সামারে আয়োজন করে কয়েক দফা টিমভিত্তিক ম্যাচ। ২০১৮ সালে এই সংগঠন এর সব মানব-আম্পায়ারের জায়গায় ব্যবহার করে ‘হক-আই’-এর একটি নতুন সংস্করণ। এটি প্রদান করে লাইভ কল। এরপরও ‘চেয়ার আম্পায়ার’ দায়িত্ব পালন করেন পুরো প্রতিযোগিতা পরিচালনা করার। তবে বল লাইনের বাইরে না ভেতরে পড়ল, এর সব কল দেয় কমপিউটার। টেলর টাউনসেন্ড বলেন : ‘এই কমপিউটার-ব্যবস্থা তাদের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি এনে দিয়েছে। টেনিসে ‘ইন’ ও ‘আউট’-এর পার্থক্যটা খুবই সূ²। আমি মনে করি হক-আই মানব-ত্রæটি দূর করতে সক্ষম হয়েছে।’ মানব-আম্পায়ার পরিশ্রান্ত বোধ করতে পারেন। অনেক সময় সূর্যের আলো তাদের সঠিক দৃষ্টিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। পোকা-মাকড় চোখে পড়ে বলটি দেখার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভ্রম ঘটাতে পারে। আম্পায়ারের মধ্যে থাকতে পারে পক্ষপাতদুষ্টতার মতো মানবিক দুর্বলতা ও বয়সের সমস্যা, চোখের সমস্যা। থাকতে পারে বিশেষ খেলোয়াড়, টি, জাতির প্রতি দুর্বলতা। কমপিউটার-ব্যবস্থা এসব সমস্যার ঊর্ধ্বে।


মেশিন যেভাবে কাজ করে 


ব্রায়ান হিকস জানান ‘প্রকৌশলীরা স্টেডিয়ামের কয়েক দিকে স্থাপন করেন এই কমপিউটার ব্যবস্থা। এরা সব লাইনের যথার্থ সঠিক মাপ নেন। এরপর সে অনুযায়ী সৃষ্টি করেন একটি ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি ওয়ার্ল্ড, যাতে ফুটে উঠবে স্টেডিয়ামে যা ঘটে। এরা ¯ ’ াপন করেন ১২টি ক্যামেরাও। এসব ক্যামেরায় ধরা পড়ে খেলার জায়গাটিতে ঘটে চলা প্রতিটি ঘটনা। এরপর প্রকৌশলীরা পরীক্ষা করে দেখেন সবকিছু ঠিক আছে কি না। ম্যাচ চলার সময় এসব ক্যামেরা বলের উড্ডয়নের দৃশ্য ধারণ করে। সফটওয়্যার বলটিকে পায় ভিডিওতে। এটি তা করতে পারে ব্রাইট ওভারকাস্টে বা শ্যাডুযুক্ত অবস্থায়। একটি ভিডিও ক্যামেরা বল উড্ডয়নের সব মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে না। আসলে এটি অতি দ্রুত ধারণ করে অনেক স্থিরচিত্র। এক সেকেন্ডে এটি যতটি ছবি নিতে পারে, তাকে বলা হয় ফ্রেম রেট। প্রতিটি ফ্রেমে বলকে দেখা যাবে নতুন অবস্থানে। এই ব্যবস্থা গণিত ব্যবহার করে এই অবস্থানের মধ্যবর্তী পথ চিহ্নিত করেন। এটি বায়ুর পরিস্থিতি ও বিবেচনায় নেয়। এই কমপিউটার সিস্টেম এরপর এই বলের পথকে স্থাপন করে একটি ভার্চ্যুয়াল কোর্টে। যখন বলটি বাস্তবে মাটিতে পড়ে, এটি তখন ভার্চ্যুয়াল কোর্টেও মাটিতে পড়ে। তখন কমপিউটার ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে জেনে যায় ভার্চ্যুয়াল লাইনের কোন পাশে বলটি পড়েছে। এটি বল মাটিতে পড়ার দৃশ্য প্লে-ব্যাক করে দেখতে পারে। এরই মধ্যে চারদিকে আলোচিত হচ্ছে এই রোবট রেফারির কথা। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে, রেফারিংয়ের কাজটি যথার্থভাবে সম্পন্ন করছে অনেক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় 








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।