https://comcitybd.com/brand/Havit

ইন্টারনেট

লাইটকয়েন কী এবং কীভাবে কাজ করে জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত

লাইটকয়েন কী এবং কীভাবে কাজ করে জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত লাইটকয়েন কী এবং কীভাবে কাজ করে জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত
 

লাইটকয়েন কী এবং কীভাবে কাজ করে জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত


ক্রিপটোকারেন্সি হচ্ছে একটি অনলাইন ডিজিটাল কারেন্সি। এই কারেন্সি সরাসরি বিনিময় বা লেনদেন হয় ইউজারদের মধ্যে। এতে ব্যাংকের কিংবা অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা নেই। লাইটকয়েন একটি ক্রিপটোকারেন্সি। লাইটকয়েনের মতো অনেক ক্রিপটোকারেন্সি বিকেন্দ্রায়িত।


একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত যে ধরনের কারেন্সি বা মুদ্রা নিয়ে কাজ করে ক্রিপটোকারেন্সি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রাব্যবস্থায় ব্যবহৃত মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ করে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার কিংবা বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত ব্লক। ডলার বা ইউরো হচ্ছে এ ধরনের মুদ্রা। 


ক্রিপটোকারেন্সির একটি লক্ষ্য ব্যাংক-ব্যবস্থার বিকেন্দ্রায়ন। আমাদের অনেকেই যারা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ভিন্ন কোনো দেশে অর্থ পাঠানো বা গ্রহণ করার কাজটি করেছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন কাজটি খুব একটা সুখকর নয়। খোলাখুলি বলতে গেলে বলতে হয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে অর্থের লেনদেনের কীভাবে চলে, তা বুঝা সহজ নয়। তার জানেন না এর জন্য এত বেশি অর্থ কেনো খরচ হয় এবং এই লেনদেনে এত বেশি সময়েই বা কেনো লাগে। এই অসুবিধাগুলো এই ডিজিটাল যুগে মানুষকে ভাবিত করে। সে ভাবনা থেকেই ক্রিপটোকারেন্সির জন্ম। প্রথম ও সবচেয়ে বড় ক্রিপটোকারেন্সি হচ্ছে বিটকয়েন (বিটিসি)। এর পরও রয়েছে সুপরিচিত আরো কিছু ক্রিপটোকারেন্সি : ইথেরিয়াম, রিপল ও লাইটকয়েন (এলটিসি)। 


বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রিপটোকারেন্সি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে বেশ জোরেশোরেই। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যেই এ নিয়ে চলে বেশি আলোচনা। আর এটি অস্বাভাবিক বা আকস্মিক কোনো বিষয় নয়। ক্রিপটোকারেন্সি তৈরি হয় চমৎকার প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আর তা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ধারা-প্রবণতা ব্যাপকভাবে পাল্টে দিতে পারে। নিশ্চিতভাবে ক্রিপটোকারেন্সির দামে ব্যাপক ওটা-নামা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে ও সমালোচনার ঝড় তোলে। দামের এই অস্থিরতা বিনিয়োগকারী, ফটকা কারবারি ও আগ্রহীদের মধ্যে উৎসুক্য জাগাতে পারে, প্রসারিত করতে পারে ক্রিপটোকারেন্সির বাজার। 


লাইটকয়েন কী?


গুগলের সাবেক চাকুরে চার্লি লি ২০১১ সালে চালু করেন ক্রিপটোকারেন্সি লাইটকয়েন। এরও আগে কোনো অজানা ব্যক্তি বা ‘সাতোশি নাকামোতে’ নামের একটি গ্রæপ ২০০৯ সালে সৃষ্টি করেন ডিজিটাল কারেন্সি বিট কয়েন। চার্লি লি লাইটকয়েন ডিজাইন করেন মূল ক্রিপটোকারেন্সি বিটকয়েনের পরিপূরক হিসেবে, প্রতিস্থাপক বা প্রতিযোগী হিসেবে নয়। এ জন্য কখনো কখনো লাইটকয়েনকে বলা হয় বিটকয়েনের ‘লিটল ব্রাদার’। চার্লি লি নিজে বলেছেন, তিনি চেয়েছিলেন ‘সিলভার’ সৃষ্টি করতে, যেখানে বিটকয়েন হচ্ছে ‘গোল্ড’।


লাইটকয়েন (Litecoin) একটি পিয়ার-টু-পিয়ার ইন্টারনেট কারেন্সি বা মুদ্রা। এর মাধ্যম যে কোনো ব্যক্তি বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে অন্য কোনো স্থানে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রায় শূন্য খরচে সবচেয়ে কম সময়ে অর্থ পাঠাতে পারে। লাইটকয়েনের লেনদেনের সময় বিটকয়েনের তুলনায় কম। তাই লাইটকয়েনকে অভিহিত করা হয় বিটকয়েনের ‘দ্রুততর সংস্করণ’ হিসেবে।


চার্লি লি ২০১১ সালে এই ক্রিপটোকারেন্সি প্রতিষ্ঠা করার পরে অবশ্য তিনি চাকরি করেন ‘কয়েনবেসে’। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে লাইটকয়েনকে কেউ বলেন ‘বিট কয়েন’স লিটল ব্রাদার’, আবার কেউ বলেন ‘বিটকয়েনের লাইট সংস্করণ’। বিটকয়েনের জনপ্রিয় বিকল্প হিসেবে লাইটকয়েনকে ‘ডিজিটাল সিলভার’ও বলা হয়। বিটকয়েনের বাণিজ্যিক পরিপূরক হিসেবে লাইটকয়েন সুপ্রমাণিত। বিটকয়েন একটি ওপেন সোর্স গেøাবাল নেটওয়ার্ক। এর কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। এটি পুরোপুরি বিকেন্দ্রায়িত। গণিতকর্ম এই নেটওয়ার্ককে নিরাপদ রাখে এবং কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতাশীল করে তোলে তার অর্থ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। লাইটকয়েনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি দ্রæততর সময়ে লেনদেন নিশ্চিত করে। এটি শীর্ষস্থানীয় গণিতভিত্তিক কারেন্সির তুলনায় মজুদ দক্ষতা বেশি বাড়ায়। এর ট্রেড ভলিউম বাড়াতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা আসে শিল্পখাত থেকে। ২০১৩ সালের নভেম্বরে সর্বপ্রথম লাইটকয়েনের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন বেশি মাত্রায় এই নতুন ক্রিপটোকারেন্সি নিয়ে আলোচনা চলে। তখন থেকেই ক্রিপটোকারেন্সির ক্ষেত্রে লাইটকয়েন হয়ে ওঠে এক স্বীকৃত নাম। বর্তমানে বাজার মূলধন বিবেচনায় লাইটকয়েন ষষ্ঠ বৃহত্তম ক্রিপটোকারেন্সি। অনেক ক্রিপটোকারেন্সি টিকতে না পেরে বাজার থেকে বিদায় নিলেও লাইটকয়েন এখনো টিকে আছে।


লাইটকয়েন যেভাবে কাজ করে


লাইটকয়েন কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে ভালো হয় ব্লকচেইন টেকনোলজি সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখা। ব্লকচেইনের মাধ্যমে ইনফরমেশন কোড ও মজুদ করা হয় একটি ব্লকে। প্রতিটি ব্লক একত্রে জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয় একটি চেইন, যে কারণে এ প্রযুক্তির নাম ব্লকচেইন প্রযুক্তি। এই ইনফরমেশন চেইন কাজ করে লাইটকয়েনের ট্র্যানজেকশন লেজার (লেনদেন খতিয়ান) হিসেবে।


ব্লকচেইন হচ্ছে উন্মুক্ত ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার বা খতিয়ান। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এই ডিস্ট্রিবিউটেড লেজারকে বর্ণনা করেছে এভাবে : ‘এই খতিয়ান দুইপক্ষের লেনদেন রেকর্ড করতে পারে দক্ষতার সাথে এবং তা স্থায়ীভাবে পরীক্ষা করার উপযোগী’। এটি নিজে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেনদেনের জন্য প্রোগ্রাম করতে পারে।


ব্লকচেইন সিস্টেমে ব্যবহৃত তথ্য নিরাপদে রাখা হয় এনক্রিপশন টেকনিক ব্যবহার করে। প্রত্যেক ইউজারের রয়েছে একটি পাবলিক অ্যাড্রেস বা প্রকাশ্য ঠিকানা, যদিও এগুলো প্রকৃতপক্ষে  জিওডোনিমাস তথা ছদ্ম নাম-ঠিকানা। তাই এই লেনদেনে ব্যবহৃত ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে সাধারণত বেনামি বা অ্যানোনিমাস বিবেচনা করা হয়। কেউ যদি এর প্রকৃত আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে বের করে প্রকৃত ব্যক্তির সন্ধান পেতে চায়, তবে প্রচুর খাটাখাটুনি করতে হয়। 


অন্য অনেক ক্রিপটোকারেন্সির মতো লাইটকয়েন ইউজারদের দিয়ে মাইন বা গুনতি করা হয়। মাইনারেরা লেনদেন পরীক্ষা করে দেখে এবং নতুন ব্লক সৃষ্টি করে জটিল গাণিতিক সমীকরণ সমাধান করে যা লাইটকয়েনকে করে তুলেছে অনেকটা গণিতভিত্তিক কারেন্সি কোহর্ট তথা মুদ্রাদল। 


পুরনো ক্রিপটোকারেন্সির মধ্যে লাইটকয়েন একটি


লাইটকয়েন ও বিটকয়েনের পার্থক্য


লাইটকয়েন বিটকয়েনের সোর্সকোডভিত্তিক হলেও এ দুয়ের মধ্যে অনেক মিল যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু পার্থক্যও। এই দুই মুদ্রাই ব্যবহার করে একটি ‘প্রুফ-অব-ওয়ার্ক প্রটোকল’। এদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হচ্ছে লাইটকয়েন অধিকতর দ্রুতগতির ও সস্তাতর লেনদেনের নেটওয়ার্ক। এলটিসি ব্লকগুলো সৃষ্টি করা হয় দ্রুততর সময়ে। বিটকয়েনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইন করতে ১০ মিনিট সময় লাগে। লাইটকয়েনের লাগে আড়াই মিনিট। এর ফলে লাইটকয়েন লেনদেন দ্রুততর ও সস্তাতর। লাইটকয়েন সব সময়েই একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিকল্প মুদ্রা ও সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। উভয় মুদ্রার সরবরাহ সীমিত। তবে লাইটকয়েনের রয়েছে উচ্চতর সরবরাহ। বিটকয়েনের সর্বোচ্চ সরবরাহের পরিমাণ ২১,০০০,০০০। অপরদিকে লাইটকয়েনের সর্বোচ্চ সরবরাহ ৮৪,০০০,০০০। 


আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে লাইটকয়েন এখনো কাজ করে চলেছে এর আরো উন্নয়ন ঘটানোর জন্য, কিন্তু বিটকয়েন আসলে তা করছে না। একটি সাম্প্রতিক উন্নয়ন হলো গরসনষবডরসনষব নামের একটি কোডের বাস্তবায়ন। বিটিসি সুযোগ দেয় বেনামি লেনদেনের, তবে এতে গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ নেই। কারণ, সব লেনদেন দেখা যবে পাবলিক ব্লকচেইনে। এর অর্থ আপনার সব বন্ধু আপনার কেনাকাটা দেখতে পারবে, যদি তাদের বিটিসি অ্যাড্রেস জানা থাকে। ধন্যবাদ জানাতে হয় ‘মিম্বলউইম্বল’-কে। এলটিসি ব্যবহারকারীদের রয়েছে তাদের লেনদেনের জন্য ‘অপশনাল প্রাইভেসি’ (ঐচ্ছিক গোপনীয়তার) সুযোগ।  


বিটকয়েনভিত্তিক লাইটকয়েনের সাথে বিটকয়েনের রয়েছে নানা মিল-অমিল


লাইটকয়েন ও বিটকয়েনের সম্পর্ক


যদি ক্রিপটোজগতের সাথে সুপরিচিত হয়ে থাকেন, তবে আপনি জানেনÑ বিটিসি নানাভাবে সেকেলে। অন্যান্য আরো অনেক ক্রিপটোকারেন্সি এমন কিছু করতে পারে, যা বিটিসি করতে পারে। তবে অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সি তা করে আরো ভালোভাবে। এমনি ধরনের একটি ক্রিপটো হচ্ছে লাইটকয়েন। তবে এলটিসির চেয়েও আরো ভালো ক্রিপটো রয়েছে। তা সত্তে¡ও একটি বিষয় হচ্ছে, যা শুধু বিটকয়েনই হতে পারে। বিটিসি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে, সবচেয়ে দামি ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে। এ ক্ষেত্রে এটি প্রতিদ্ব›দ্বীহীনই থেকে যাবে। এ কারণে এলটিসির লক্ষ্য বিটিসিকে অপসারণ নয়। বরং এটি হতে চায় বিটিসির সাইডকিক, অর্থাৎ পাশাপাশি থেকে বন্ধুর মতো চলতে চায়। বিটকয়েন হচ্ছে ‘ডিজিটাল গোল্ড’ আর লাইটকয়েন চায় ডিজিটাল সিলভার হতে।


লাাইটকয়েনের বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায় লাইটকয়েন ক্রিপটোকারেন্সির লেনদেন চলে ব্লকচেইভিত্তিক প্রযুক্তি দিয়ে। এর প্রাথমিক লক্ষ্য, কোনো ব্যাংক বা তৃতীয় মাধ্যম ছাড়া লেনদেন সম্পন্ন করা। বিটকয়েন ও লাইটকয়েনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি অনেকটা একই ধরনের। কিন্তু লাইটকয়েন বিটকয়েনের চেয়ে দ্রুততর সময়ে লেনদেন সম্পন্ন করতে সক্ষম। 


লাইটকয়েন দিয়ে কী করতে পারি?


অধিক থেকে অধিকসংখ্যক মার্চেন্ট পেমেন্ট মেথড হিসেবে ক্রিপটো ব্যবহারের সুযোগ দেয়। আর জনপ্রিয় ক্রিপটোগুলোর মধ্যে লাইটকয়েন অন্যতম। কারণ, এর ফি কম। বিভিন্ন ধরনের মার্চেন্ট বেশ আগে থেকেই অর্থ পরিশোধে লাইটকয়েন গ্রহণ করছে। এমনি ধরনের এক মার্চেন্ট হচ্ছে Travala.com। এটি ব্যবহারকারীদেরকে লাইটকয়েন দিয়ে হোটেল বুক করার সুযোগ দেয়। লাইটকয়েন গ্রহণ করে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি ঘটনা ঘটে ২০২১ সালে, যখন PayPal ২ কোটি ৮০ লাখ ব্যবসায়ীর জন্য লাইটকয়েন ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে পেপাল লাইটকয়েন খরচের কাজকে আরো সহজ করে তোলে। 


শুরু থেকেই প্রায় প্রতিটি এক্সচেঞ্জে লাইটকয়েন পাওয়া যায়। অতএব বরাবরই মূল্য পাঠানোর ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী টুল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আপনি যদি এক ওয়ালেট থেকে আরেক ওয়ালেটে পাঠান, তখন আপনাকে নেটওয়ার্ক ফি হিসেবে শুধু ১০+ ডলার দিতে হবে। কিন্তু যে ওয়ালেটে আপনি অর্থ পাঠাচ্ছেন, সেটি যদি সোয়াপিং কয়েন (মুদ্রা অদলবদল) অনুমোদন করে, তবে আপনি বিটকয়েন বদল করে আপনার এক্সচেঞ্জে পেতে পারেন লাইটকয়েন। আর মাত্র কয়েক সেন্ট খরচ করে এই লাইটকয়েন আপনার ওয়ালেটে পাঠাতে পারবেন। এরপর আপনি তা আবার অদলবদল করতে পারবেন। এই মুদ্রা অদলবদল বা  সোয়াপিংয়ের জন্য খরচ বাবদ যে ফি দিতে হবে, তা সাধারণত বিটকয়েন লেনদেনের খরচের চেয়ে কম। অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির বেলায় এই কাজটি করা যায়, তবে উচ্চ হারে ফি দিয়ে।  


অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সির বদলে লাইটকয়েন ব্যবহার করা যাবে কম ফি’র সুবিধা পেতে


লাইটকয়েন থেকে কি সুদ পাওয়া যায়?



লাইটকয়েন ‘প্রুফ-অব-ওয়ার্ক কয়েন’ হওয়ায় সুদ অর্জন করার লক্ষ্যে এটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না। তা সত্তে¡ও অনেক ক্রিপটো সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে ঋণ দিয়ে আপনি বছরে ৪ শতাংশ হারে সুদ পেতে পারেন। এর অর্থ লাইটকয়েন ধরে রেখে কেউ লাইটকয়েন বাড়িয়ে তুলতে পারবে। একটি জনপ্রিয় ক্রিপটো সেভিংস অ্যাকাউন্ট হচ্ছে ‘সেলসিয়াস’। এই অ্যাকাউন্টে লাইটকয়েন রাখলে বছরে ৪.০৮ শতাংশ হারে সুদ পেতে পাওয়া যায়।


লাইটকয়েনের দাম কি বাড়বে?


আরো অনেক জনপ্রিয় ক্রিপটোকারেন্সির মতো লাইটকয়েন এর এক দশকের ইতিহাসে দামের ক্ষেত্রে এক ধরনের অস্থিরতা প্রদর্শন করেছে। এই অস্থিরতা কখনো ছিল এর দাম বেড়ে যাওয়া, আবার কখনো পড়ে যাওয়া নিয়ে। লাইটকয়েনের দাম সর্বোচ্চ বাড়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের দিকে। তখন লাইটকয়েনের দাম ওঠে ৩৭৫ ডলারে। আর এর দাম সর্বম্ন পর্যায়ে নামে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। তখন এর দাম নামে ২৪ ডলারে। ২০১৯ সালের প্রথম দিকে আবার এ দাম বাড়তে শুরু করে।


আমরা বর্তমানে একটি তেজী বাজারে অবস্থান করছি। তাই সব সেরা কয়েনগুলো নিকট-ভবিষ্যতে আরো ভালো করতে পারে। অনেকেই লাইটকয়েনের ব্যাপারে আশাবাদী, শেষ পর্যায়ে এটি ভালো করবে। কারণ, লাইটকয়েন কয়েকটা মন্দাবাজারের পরও টিকে আছে এবং ক্রিপটো জগতে তৈরি করতে পেরেছে ব্যাপক ভিত্তি।


আরো অনেক ক্রিপটোকারেন্সি রয়েছে, যেগুলো কারিগরি দিক বিবেচনায় সুপিরিয়র। কিন্তু বিটকয়েনের মতো লাইটকয়েনেরও রয়েছে এক ধরনের ‘ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস’। লাইটকয়েন এখন সুপ্রতিষ্ঠিত এক ক্রিপটোকারেন্সি। যেহেতু লাইটকয়েনের সংখ্যা সীমিত, তাই এটি সৃষ্টি করা যাবে। দাম বাড়বে আরো মূলধারার ক্রিপটোকারেন্সির। এর দ্রুতগতি ও লেনদেনের খরচ কম থাকা এবং এর নতুন প্রাইভেসি টুলের কারণে আসলে ক্রিপটো অ্যাডপশন বা গ্রহণের দিক থেকে লাইটকয়েন বরাবরই ছিল সামনের কাতারে। আশা করা যায়, আরো ব্যবসায়ী ভবিষ্যতে এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করবেন। 


লাইটকয়েনের ফটকা কারবার


কেউ যদি ফটকা কারবারের জন্য লাইটকয়েন কিনতে চায়, তবে তাকে জানতে হবে এর অনন্য উপায় : যেভাবে ক্রিপটোকারেন্সি কেনা ও ধরে রাখা হয়। প্রচলিত অনেক ব্রোকারের মাধ্যমে লাইটকয়েন ও অন্যান্য ক্রিপটোকারেন্সি কেনা সম্ভব নয়। লাইটকয়েন কিনতে হবে একটি ডিজিটাল ওয়ালেটে; যে কোনো একটি ক্রিপটোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কিংবা একটি অনলাইন ব্রোকারেজ ফার্মের মাধ্যমে, যেটি ক্রিপটো ট্রেডিং অফার করে থাকে। কোথা থেকে ক্রিপটোকারেন্সি কিনে ধরে রাখা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ফি, সিকিউরিটি, অ্যাক্সেসিবিলিটি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। কোথায় লাইটকয়েন কেনা হয়, সেটি কোনো বিবেচ্য নয়। তবে কেনা লাইটকয়েন অবশ্যই জমা রাখতে হবে একটি ওয়ালেটে। একটি ওয়ালেট হয় একটি সফটওয়্যার প্রোগ্রাম অথবা সত্যিকারের হার্ডওয়্যার, যা ডিজিটাল কারেন্সি গ্রহণ ও পাঠানোর সুযোগ দেয় এবং নজর রাখে ফটকা কারবারের (স্পেকুলেটিভ প্লে) ওপর।


এটি জেনে রাখা ভালো ক্রিপটোকারেন্সি ডলারের মতো প্রচলিত ধারায় ব্যাংকে হিসাবে জমা রাখা হয় না। বরং এর পরিবর্তে ক্রিপটোকারেন্সির লেনদেনের রেকর্ড রাখা হয় বøকচেইনে। বেশিরভাগ ওয়ালেট অপশন বিবেচিত হয় অফলাইন বা অনলাইনে। সাধারণত অনলাইন ওয়ালেটগুলো বিবেচিত অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো অফলাইনের ওয়ালেটের তুলনায় হ্যাকিংয়ের জন্য বেশি উন্মুক্ত। একটি অফলাইন ওয়ালেট যেমন হার্ডড্রাইভে জমা রাখা অফলাইন ওয়ালেট অধিকতর নিরাপদ হতে পারে, কিন্তু বায়ারেরা এ ক্ষেত্রে হার্ডড্রাইভ হারানোর ঝুঁকিতে থাকে।


লাইটকয়েনের ঝুঁকি


বেশিরভাগ ক্রিপটোকারেন্সির মতো লাইটকয়েনেরও একই ধরনের কিছু ঝুঁকি রয়েছে। প্রথমত, সম্ভাবনাময় বায়ারেরা স্ক্যামারদের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। দুর্ভাগ্য, এখানে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা সব সময়েই অন্যের দুর্বলতার সন্ধানে থাকে। যেসব ক্রিপটোকারেন্সি অপেক্ষাকৃত নতুন ও বিস্ময়কর, সেগুলোর ব্যাপারে কিছু ভুল বোঝার অবকাশ থাকে। সেখানেই সুযোগসন্ধানীদের আনাগোনা বেশি। 


ক্রিপটোকারেন্সি ওয়ালেটগুলো হ্যাকিংয়ের অভেদ্য নয়। ক্রিপটোকারেন্সি কোথা থেকে কেনা হবে, কোথায় জমা রাখা হবে সে সিদ্ধান্ত নিতে হ্যাকিংয়ের বিষয়টি একটি উদ্বেগের কারণ। যদি ক্রিপটোকারেন্সি হ্যাকিং হয় অথবা চুরি যায়, তবে তা পুনরুদ্ধারের কোনো উপায় নাও থাকতে পারে। ক্রিপটোকারেন্সির ব্যাপারে নানা ধরনের ‘যদি’র শঙ্কা রয়েছে : ‘যদি এমনটি ঘটে, তখন কী হবে?’ উদাহরণত, যদি কোনো ক্রিপটোকারেন্সি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য না হয়, তখন কী হবে? ক্রিপটোকারেন্সি ও বøকচেইন টেকনোলজি এখন প্রারম্ভিক পর্যায়ে, অতএব এ নিয়ে শঙ্কা থাকা স্বাভাবিক।  


ইন্টারনেটের উদ্ভাবন ও আগামী ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর প্রেক্ষাপটে বলা মুশকিল কোন ক্রিপটোকারেন্সি ভবিষ্যতে সফল হতে পারে। এখনো বলা মুশকিল, শেষ পর্যন্ত বøকচেইন প্রযুক্তি কীভাবে ও কতটুকু ব্যবহার হবে। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউয়ের ব্লকচেইনের অ্যাডপশন বিষয়ে একটি অভিমত হচ্ছে ‘যখন প্রভাবটা হবে অপরিমেয়, তার পরেও বøকচেইন প্রযুক্তির কয়েক দশক সময় লেগে যাবে আমাদের আর্থনীতিক ও সামাজিক অবকাঠামোতে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হতে। এই অ্যাডপশন প্রসেস (গ্রহণ করে নেয়ার প্রক্রিয়া) চলবে ক্রমান্বয়ে এবং স্থিতিশীলভাবে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনের ঢেউয়ের মতো হঠাৎ করেই পরিবর্তন-গতি বেড়ে যাওয়ার মতো করে নয়।’


আবার কারো মতে তাদের প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনের অভিজ্ঞতা ও সমীক্ষাদৃষ্টে তাদের মনে হয় ব্লকচেইনের একটি বিপ্লব ঘটাতে চাইলে সামনে আসবে নানা বাধা : প্রাযুক্তিক, প্রশাসনিক, সাংগঠনিক ও এমনকি সামাজিক বাধাও। ব্লকচেইন ও ক্রিপটোকারেন্সি ব্যবস্থা বর্তমানে বড় ধরনের রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে সামনে আরো চ্যালেঞ্জ অনবরত আসতে পারে। 


ঝুঁকি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া


উদ্বায়ী সম্পদ কেনার মধ্যে ঝুঁকি থাকাটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটুকু জানা, ক্রিপটোকারেন্সি উদ্বায়িতার কারণে উচ্চমাত্রার ঝুঁকি বহন করে। ক্রিপটোকারেন্সি কেনার সময় একজন বায়ারকে জানতে হবে, কতটা লোকসানের বোঝা তিনি বহন করতে পারবেন। এই কারেন্সি কেনার বেলায় সহায়ক হতে পারে অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত উপায়ে বিনিয়োগ করা। একটা অপশন আছে যথাসম্ভব কম করে ক্রিপটো কেনা, এর ফলে ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা কমে। উদাহরণত, বিনিয়োগকারী ও ফটকা-কারবারি বিবেচনায় নিতে পারেন, বিভিন্ন ধরনের তহবিল ব্যবহার করে একটি স্টক ও বন্ডের একটি পোর্টফোলিও গড়ে তোলার বিষয়টি। যদিও এ ধরনের বিনিয়োগেও উদ্বায়ী পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, তবে বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়ার উদাহরণও রয়েছে। সব সময় মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগের সাখে সাথে হাত ধরাধরি করে চলে ঝুঁকি, যার মধ্যে রয়েছে লোকসানের ঝুঁকি।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।