https://comcitybd.com/brand/Havit

ইন্টারনেট

সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে

সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে
 

সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে


সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনের অপব্যবহার এই সময়ে ক্রমশই বিপজ্জনক আকার নিচ্ছে বলে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপব্যবহার দিন দিন মাত্রাছাড়া রূপ ধারণ করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই কারণে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও অপপ্রচার আটকাতে বা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এই দাবি উঠেছে বহুদিন আগে থেকেই। অনেক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম অনলাইনে ভাইরাল হিসেবে প্রচারিত কোনো বার্তা বা বক্তব্যের অরিজিনেটর কে তা ঠিক করে জানাতে পারে না। এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনে অপব্যবহার ও অপপ্রচার বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এই সময়ে ডিজিটাল বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৫৫ ভাগ মানুষ অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এসব ব্যবহারকারী গড়ে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে সময় কাটাচ্ছে এসব প্ল্যাটফর্মে। এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন গুজবনির্ভর অপপ্রচারের এক আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সংঘবদ্ধভাবে মাঠে রয়েছে অপরাধীরা, এসব কুৎসিত অপপ্রচারের যেন কোনো শেষ নেই। একের পর এক কল্পকাহিনী জন্ম দিয়ে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় সর্বত্র।


অপপ্রচারকারীরা নামে-বেনামে ইউটিউব চ্যানেল, আইপি টিভি, অনলাইন পোর্টালসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা রকম পেজ, গ্রুপ, ইভেন্ট খুলে যে যার ইচ্ছামত মনের মাধুরি মিশিয়ে নানা অপপ্রচারে লেগে আছে। তথাকথিত ব্রেকিং নিউজের নামে সকাল-বিকাল নানা গুজবের ভিডিও বানানো হচ্ছে। হঠাৎ আবিষ্কৃত এসব গায়েবি খবর তৈরি করে নিমেষেই ছড়িয়ে দেওয়া হয় প্রতিনিধিদের কাছে। এসব কুৎসিত অপপ্রচার অনুমোদনহীন অনলাইন চ্যানেল, পেজ ও গ্রুপে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়।


নামে-বেনামে বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি খুলে নানা কল্পকাহিনী প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। এসব মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই ব্যস্ত। এই অপপ্রচারে আওতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু,  প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার, বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক মানুষ, সশস্ত্রবাহিনী, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী বাদ পড়ছে না কেউ। 


সাইবার জগতের বিস্তার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। দিন যত যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ এর সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে মোবাইল প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ইন্টারনেট সুবিধা সহজিকরণ করা হয়েছে। এর বহু ভালো দিক রয়েছে। সেই সাথে কিছু খারাপ দিকও আছে। তাই যখন কোনো ভালোর সাথে খারাপটা আসছে তা যেন বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং এ বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না। টিকটকের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বিপথে যাচ্ছে কিনা তা ভাবার সময় এসেছে। আমরা ডিজিটাল নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি এ ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ডিজিটাল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সুতরাং এ সাইবার স্পেসের হুমকি আগামীতে আরও ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাবে এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ফেসবুক-ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। কারণ এগুলো বন্ধ করে দিয়ে দূরে থাকা যাবে, তা নয়। এজন্য শুধু আজকে নয়, আগামী দিনগুলোতে সাইবার জগতের কী ধরনের বিস্তার ঘটবে, আমরা কোন কোন জায়গায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এখনই ভাবতে হবে।


উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এসব সার্ভিস প্রোভাইডারকে আমাদের দেশের রেজিস্ট্রার কোম্পানি উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা রেজিস্ট্রারের আওতায় এলে গুজব ও সামাজিক অস্থিরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে অনেকে মনে করেন। কারণ তখন তারা আমাদের দেশের আইনকানুন, নীতিমালা এবং আদালতের নিদের্শনা মানতে বাধ্য হবে। এই সার্ভিস প্রোভাইডারগুলো সরকারের আহŸানে সাড়া দিচ্ছেন। বাংলাদেশে এখন ফেসবুক-ইউটিউবের বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখানে তাদের কোনো অফিস নেই। 


দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে গুজব রটানো ও অপপ্রচার চলছে। ভুয়া আইডি এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ার কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংঘটিত অপরাধ দমনে আমাদের স্থানীয় আইন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়না। এই মাধ্যম ব্যবহার করছে বাড়ছে প্রতারণাও। ছাত্রদের নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়। 


সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকা তথ্য-প্রযুক্তি যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি এখন সবার হাতে  মোবাইল, ইন্টারনেটসব সবকিছুই। তথ্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণের সাথে সাথে সাইবার ক্রাইম কিংবা প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও বাড়ছে। আবার নানা ষড়যন্ত্র চলছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। রটানো হয় নানা ধরনের গুজব। সামাজিক অপরাধসহ সবধরনের অপরাধই সংঘটিত হচ্ছে।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও মিথ্যাচার অথবা অপরাধ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা বৈশি^ক সমস্যা। বিশে^র অনেক দেশকেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউবের যেসব কনটেন্ট সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করছে, দ্রুত সেগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসব অপপ্রচার সরল ও নিরীহ জনগণকে প্রভাবিত করছে। সরল মানুষ না বুঝে তাদের বিশ্বাস করছে। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক, ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) এসব বিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। কিছু ইউটিউব, যারা সরকারের ভালো দিক প্রচার করছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলছে, তাদের উৎসাহিত করতে হবে, যাতে যারা অপপ্রচার চলাচ্ছে তাদের শক্তি দুর্বল করে দিতে পারে। গুজবকারীদের শনাক্তে নিয়মিত সাইবার প্যাট্রলিং করা হচ্ছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গুজব রটনাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। 


ফেসবুক, ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সামাজিক অস্থিরতার ভিডিও শেয়ার বা বার্তা ছড়াচ্ছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি গুজব সৃষ্টিকারী এসব ভিডিও বা বার্তার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে। সাইবার জগতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে নিয়মিতভাবেই দেশি-বিদেশি অনেক চক্র মোটা অঙ্কের অর্থ লুটে নিচ্ছে। বিগো লাইভ, টিকটকসহ এ ধরনের অ্যাপস সামনে রাখছে অপরাধীরা। কিন্তু এর নেপথ্যে বড় ধরনের ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম জড়িত। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনের এসব অপব্যবহার ও অপপ্র্রচার এখনই রোধ করতে হবে।


সাইবার অপরাধ দমনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ


প্রতি ১২ সেকেন্ডে আমাদের দশে ১টি সোশ্যাল মিডিয়া আইডি খোলা হয় ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে। বিটিআরসির তথ্যমতে, এখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার। আর মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের একটি বড় অংশ এখন হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা যাকে বলা হয় কম্পোমাইজ হয়ে যাওয়া। অথবা ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। এছাড়াও সাইবার বুলিং, অনাকাক্সিক্ষত কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধের ঘটনাও ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এখন নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নেটিজেনরা। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, টুইটার, ভাইবার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদির মাধ্যমে অনেকেই সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হচ্ছেন। এসব ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে কারো ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো বা মানসিক নির্যাতন বা অন্যায় কোনো কিছুতে প্রলুব্ধ করা। কিশোর-কিশোরীরাই প্রথম দিকে এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছিল। এখন বিভিন্ন বয়সীরাও এ ফাঁদে পা দিচ্ছেন।


বর্তমান সরকার যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়, তার মধ্যে শীর্ষে আছে তথ্য-প্রযুক্তি। এ খাতে দেশ যথেষ্ট এগিয়েও আছে। শহরের সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তির মোবাইল, ইন্টারনেট গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে। এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা সহজ হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণের সাথে সাথে সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও দ্রæত বেড়ে চলেছে। নিরীহ মানুষ নানা ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছে। আবার সরকারের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্র চলছে তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে। রটানো হচ্ছে নানা ধরনের গুজব। বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক অপরাধ যেমন ঘটছে, তেমনি ছড়ানো হচ্ছে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা। 


বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার। তথ্য বলছে দেশের ৪৯ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী সাইবার বুলিংয়ের নিয়মিত শিকার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, দেশের তিন-চতুর্থাংশ নারীই সাইবার বুলিংয়ের শিকার। তবে এ বিষয়টি অপ্রকাশিতই থেকে যায়। মাত্র ২৮ শতাংশ অনলাইনে নির্যাতনের বিষয়টি প্রকাশ করে অভিযোগ দায়ের করেন। বাকিরা ভয়ে থাকেন অভিযোগ করলেই তাদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হবে এই ভেবে। সাইবার বুলিং ছাড়াও মোবাইল ফোন বা ই-মেইলেও এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসবের ফলে নারীসহ ভুক্তভোগীদের মধ্যে প্রচন্ড হতাশা, পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, অনিদ্রা ইত্যাদি নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমনকি আত্মহননের ঘটনাও ঘটে থাকে।


তথ্য-প্রযুক্তির ফায়দা নিয়ে আবেগপ্রবণ তরুণ সমাজকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টায় তৎপর একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ফেসবুকে পেজ, গ্রুপ ও ইউটিউবে চ্যানেল খুলে নানা রকম ধর্মীয় উগ্র মতবাদ প্রচার করা হচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ এর সাথে সংযুক্ত হচ্ছেন। এর মাধ্যমে যাতে কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত করতে না পারে সেজন্য কঠোরভাবে সাইবার মনিটরিং করতে হবে। ইন্টারনেট সুবিধা ইজি হয়েছে। এর বহু ভালো দিক রয়েছে। সেই সাথে কিছু খারাপ দিকও আছে। তাই যখন কোনো ভালো কাজ করবেন তার সাথে যে খারাপটা আসছে তা যেন বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে না পারে। তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সুতরাং সাইবার অপরাধ এখন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। তরুণ প্রজন্মকে বিপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তরুণদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ যাতে মনিটরিং করা যায় তার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যেহেতু আমরা ডিজিটাল নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি এ ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। 


আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে তাই সাইবার স্পেসের হুমকি আগামীতে আরও ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফেসবুক-ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। আবার এগুলোকে বন্ধ করে দিয়েও যে দূরে থাকা যাবে, তা নয়। আমরা কোন কোন জায়গায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি, দেশের ভিতরের ও বাইরের শত্রু আমাদের কী ধরনের আঘাত হানতে পারে, তা কীভাবে প্রতিহত করা যায় সে ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে যে কোনো ধরনের সাইবার অ্যাটাক থেকে রক্ষা পেতে পারি।


তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ শনাক্তে দেশের প্রচলিত আইন দুর্বল ভেবে অপরাধী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকেই (বিটিআরসি) এ বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এবারের দুর্গাপূজায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, গুগলের মতো জনপ্রিয় সেবাগুলো কি এ দেশে নিয়ন্ত্রণহীনই থেকে যাবে  এমন প্রশ্ন বারবার সামনে আসছে। মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান সারাবিশ্বের মধ্যে দশম। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। সহজলভ্যতার কারণে একদিকে যেমন বেড়ে চলছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে সাইবার অপরাধও। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে বেশি। প্রযুক্তির এই যুগে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তি জনমুখী হয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে মানুষকে। এটা যেমন সত্য এবং যুগের বাস্তবতা, তেমনি এর অপব্যবহারও হয়ে উঠছে মানুষের যন্ত্রণার অন্যতম কারণ। স্কুল-কলেজ পড়–য়া অল্পবয়সী মেয়েরাই এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি। শুধু যে নারী নির্যাতনের লক্ষ্যেই সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও সাইবার অপরাধীরা ভয়ংকর অপরাধ করে চলেছে। মোবাইল ফোনে ভুয়া মেসেজ দিয়ে নম্বর হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।


এছাড়া আরেকটি বড় অপরাধ প্রবণতা হলোÑ ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। আমরা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক প্রতারণা ও অপরাধের খবর দেখি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরাই বলছেন, এ সংক্রান্ত অপরাধের মাত্রা আরো বেশি, অনেক অপরাধের খবরই সংবাদমাধ্যমে আসে না। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকে এ রকম অপরাধের শিকার হয়েও থানা-পুলিশ কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ করছেন না। ফলে অনেক ঘটনাই বিচারের আওতায় আসছে না আর যেগুলো আসছে, সেগুলোরও অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীদের শনাক্ত করা যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে রাখতে হবে, সাইবার অপরাধ যেমন বাড়ছে তেমনি তা দমনেও অপরাধ তদন্ত বাহিনীকে প্রশিক্ষিত হওয়া দরকার। 


প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে এবং অপরাধীরা সে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে চলেছে। দেশের নিরাপত্তা এবং সুনাম রক্ষার স্বার্থে, সাইবার অপরাধী শনাক্ত এবং দমনে প্রযুক্তিপূর্ণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার বিকল্প থাকতে পারে না। পাশাপাশি প্রয়োজন হয় যুগোপযোগী আইন। দেশে এখনো সেগুলো গড়ে ওঠেনি। বিশ্বের অনেক দেশ এই বিষয়ে আইন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আইনের আওতায় এনেছে। আমাদেরও সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।


সাইবার অপরাধে চুপ থাকার নীতিই বড় ক্ষতির অন্যতম কারণ। পরিবারের কথা ভেবে কিংবা সম্মান হারানোর ভয়ে অনেকেই সব ‘চুপচাপ’ সয়ে যান কিংবা চেপে যান। অপরাধীরা এর ফলে আরো বেশি সুযোগ নেয়। তারা আর্থিক সুবিধা আদায় করতে করতে একসময় ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন ফাঁদেও ফেলে। ইন্টারনেটের এই সময়ে এসে সাইবার আক্রমণ জটিল এক মনস্তাত্তি¡ক উপদ্রব। একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করা। আবার একজনের ছবি বা ভিডিও বিকৃত করে অনলাইনে তুলে ধরাও বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে। এটি এক ধরনের সাইবার অপরাধ। তবে এসব অপরাধ দমনে আইনও রয়েছে দেশে। দরকার শুধু সচেতন থাকা। যদি বিষয়টি পারিবারিক গÐির বাইরে চলে যায়। তবে আইনের আশ্রয় নিতেই হবে। এক্ষেত্রে পুলিশি সহযোগিতা এড়িয়ে চললেই বরং বিপদ। 


কিছু ধাপ অনুসরণ করলে এই কঠিন কাজই খুব সহজ হয়ে যায়। এর মধ্যে প্রথম কাজ হচ্ছে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। সাথে রাখতে হবে হয়রানির প্রমাণও। স্ক্রিন শট কিংবা মেসেজ। হয়রানির শিকার যেকেউ এখন ৯৯৯ অথবা পুলিশের ফেসবুকে পেজে নক করলেও সহায়তা পেতে পারেন। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হটলাইন ১০৯২১ নম্বরে গোপনীয়তা রক্ষা করে এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা হয়। সরাসরি বিটিআরসির ফোনে ও ই-মেইলেও অভিযোগ করা যায়। বিড়ম্বনার শিকার যে অনলাইন জগতে সেই জগতেই এর সুরাহা সন্ধানেরও পথের দিশা পাওয়া যাচ্ছে।


সাইবার অপরাধীদের শনাক্ত, গ্রেফতার ও অভিযোগ প্রমাণ করা সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের জন্য সময়সাপেক্ষ ও বেশ চ্যালেঞ্জিং। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছেÑ বিভিন্ন দেশের সাথে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রিটি (এমএলএটি) না থাকা, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের লগ ডাটা সংরক্ষণে গাফিলতি, সংঘটিত অপরাধ সময়মতো না জানানো এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা ও দক্ষ জনবলের অভাব। সাইবার অপরাধ মোকাবেলায় ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন টিম, সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন, ইন্টারনেট রেফারেল অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং, ই-ফ্রড ইনভেস্টিগেশন ও সাইবার ক্রাইম নিয়ে তদন্তের জন্য বিভিন্ন টিম কাজ করছে।


ফেসবুক, ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা সামাজিক অস্থিরতার ভিডিও শেয়ার বা বার্তা ছড়াচ্ছে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি গুজব সৃষ্টিকারী এসব ভিডিও বা বার্তার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ছে। সাইবার জগতে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে নিয়মিতভাবেই দেশি-বিদেশি অনেক চক্র মোটা অঙ্কের অর্থ লুটে নিচ্ছে। বিগো লাইভ, টিকটকসহ এ ধরনের অ্যাপস সামনে রাখছে অপরাধীরা। কিন্তু এর নেপথ্যে বড় ধরনের ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম জড়িত। সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইনের এসব অপব্যবহার ও অপপ্র্রচার এখনই রোধ করতে হবে এবং সমাজের সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।








০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।