https://comcitybd.com/brand/Havit

ইন্টারনেট

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের হাঁড়ির খবর

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের হাঁড়ির খবর বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের হাঁড়ির খবর
 
বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস মহামারী মানুষকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো ও বিনোদনের বাইরেও ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার শিখিয়েছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, জীবনযাত্রা, শিক্ষামূলক, বিনোদন, গেমিং, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত যোগাযোগ, মোবাইল আর্থিক সেবা ও ই-কমার্সসহ বহু খাতেই অভিজ্ঞতার উন্নয়নের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করছে। ফলে ইন্টারনেট ভিত্তিক অ্যাপ ব্যবহার বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে মোবাইল ডেটা এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীর মধ্যে মানুষ প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আগে সেখানে মানুষ গড়ে ২ ঘণ্টা করে ব্যবহার করত। অংকের হিসেবে এই সময়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে চার গুণ। করোনার নতুন বাস্তবতায় দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে দুর্বার গতিতে।




আর এই ব্যান্ডউইথের সবচেয়ে বড় অংশ যোগান দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির তত্ত্বাবধানে অপটিক্যাল ফাইবার সাবমেরিন কমিউনিকেশন ক্যাবল সিস্টেম কনসোর্টিয়াম সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডিল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (সি-মি-উই-৪)-এর মাধ্যমে ৬০০ গিগাবিট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) এবং সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ১৩০০ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। 

সি-মি-উই-৪ অপটিক্যাল ফাইবার সাবমেরিন ক্যাবলটি প্রায় ১,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবংএটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের মধ্যে প্রাথমিক ইন্টারনেট মেরুদন্ড প্রদান করছে। সি-মি-উই-৫ অপটিক্যাল ফাইবার সাবমেরিন ক্যাবলটি প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি ১৯টি ল্যান্ডিং পয়েন্টের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ২৪ টেরাবিট ডিজাইন ক্ষমতাসহ ব্রডব্যান্ড যোগাযোগ সরবরাহ করছে।

সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের উন্নয়ন কাজ বর্তমানে চলমান। এই কনসোর্টিয়ামে ১৫টি প্রতিষ্ঠান যোগদান করেছে। সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলঙ্কা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবুতি টেলিকম জিবুতি, মোবিলিংক সৌদি আরব, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল চায়না, টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিসর ও অরেঞ্জ ফ্রান্স। এটির ব্যান্ডউইথ হবে ১২০ টেরাবিট পার সেকেন্ড। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে সি-মি-উই-৬-এর সাথে বাংলাদেশ যুক্ত হবে। 

বিটিআরসির তথ্য মতে, ২০১৬ সালে যেখানে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের চাহিদা ছিল ২৬১.২৪৯ জিবিপিএস, সেখানে ৬ বছরে ২০২১ সালে ২৬৫৭ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাহিদা বিদ্যমান। আর ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে এই চাহিদা যথাক্রমে ৭৭.৬৮ শতাংশ, ৭১.৯১ শতাংশ, ২৩.৫৩ শতাংশ ও ৮৫.২৭ শতাংশ বেড়ে ৪৬৪.১৭৮ জিবিপিএস, ৭৯৭.৯৭০ জিবিপিএস, ৯৮৫.৭২০ জিবিপিএস এবং ১৮২৬.২৫৬ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ বৃদ্ধি পায়। আর ২০১৬ থেকে ২০২১ এই সময়ে ৯১৭.০৪ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে ৭টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি) দিয়ে ইন্টারনেটের বাড়তি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য মতে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৭টি আইটিসি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড, নোভোকম লিমিটেড, ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স কমিউনিকেশন লিমিটেড, বিডিলিংক কমিউনিকেশন লিমিটেড, ম্যাংগো টেলিসার্ভিস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড। আইটিসি অপারেটরদেও ভারতের সাবমেরিন ক্যাবল প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানির সীমাহীন ক্ষমতা রয়েছে। তবে এখানে চ্যালেঞ্জ রয়েছে ভারত নির্ভরতার। 

ব্যান্ডউইথের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি দেখে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, খুব শীঘ্রই আমরা বেসরকারিখাতে প্রাথমিকভাবে নতুন দুটি সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেব। ইতিমধ্যে বিটিআরসি লাইসেন্সিং গাইড লাইন হাল নাগাদেও কাজ শুরু করছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ক্যাবল লাইন তৈরি, পরিচালনা, সাবমেরিন ক্যাবল সিস্টেম মেরামত ও সেবার কাজ করবে।

বিটিআরসি’র তথ্যমতে, দেশে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষে মোট মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ কোটি ১০ লক্ষ ২০ হাজার। ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১২ কোটি ৩৮ লক্ষ ২০ হাজার। এরমধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১১ কোটি ৩৭ লক্ষ ৩০ হাজার। আইএসপি এবং পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৯০ হাজার। বিটিআরসি’র লাইসেন্সিং প্রথা অনুযায়ী দেশে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে তথা আইআইজি গুলোকে চাহিদা অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ দিয়ে থাকে বিএসসিসিএল এবং আইটিসিগুলো। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার তথা আইএসপি এবং মোবাইল ফোন অপারেটর গুলোকে চাহিদাঅনুযায়ী ব্যান্ডউইথ দিয়ে থাকে আইআইজিগুলো।

ইউসিবি অ্যাসেটম্যানেজমেন্টের গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদনে পূর্বাভাস করা হয়েছে বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে মোবাইল ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। ইউসিবি অ্যাসেটম্যানেজমেন্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদনে ২০২৫ সালে মোট গ্রাহকের মধ্যে ৫৪ শতাংশই ফোরজি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ৬ শতাংশ মানুষ ফাইভজি নেটওয়ার্কেও আওতায় থাকবে এবং খুব কম সংখ্যক মানুষ টুজি ও থ্রিজি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল হবে। 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, কমপিউটার জগৎ এবং মহাসচিব, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম।

ফিডব্যাক : mahaqueanu@gmail.com







০ টি মন্তব্য



মতামত দিন

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।







পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন? পুনরায় রিসেট করুন






রিভিউ

আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন। যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।